যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ হুমকিতে

যমুনা সার কারখানার বর্জ্য পানি ড্রেন করে নামানো হচ্ছে আবাদি জমি ও বিলের দিকে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য প্রবাহিত হয়ে আশপাশের গ্রামগুলোর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মরে যাচ্ছে কৃষকের আবাদি ফসল, পুকুর ও বিলের মাছ এবং বাগানের গাছপালা। এতে চলতি বোরো মওসুমেপ্রায় দেড় হাজার বিঘার জমিতে কাক্সিক্ষত ফসল পায়নি কৃষক। বারবার কারখানার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা ফসলি জমির মালিকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দৈনিক এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনে সক্ষম উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকেই কারখানার ক্যামিকেলযুক্ত বিষাক্ত বর্জ্য পানি বিকল্প উপায়ে শোধন বা নিষ্কাশন না করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে জমি ও বিলের দিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে পোগলদিঘা ইউনিয়নের ঢুরিয়ার ভিটা, পাখিমারা, চরপাড়া, কান্দারপাড়া ও আওনা ইউনিয়নের মেন্দারবেড়, গোয়ালবাথান ও টিকরাপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রাম কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ক্ষতির শিকার। চর্মপীড়ার ভয়ে ক্ষেতে কাজ করার শ্রমিক মিলেনা। পাঙ্গাইশ্যা, বড়বাইদ ও খুটামারা বিলে মাছ চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে কারখানার সার পঁচা ও বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে খুটামারা বিলের অর্ধকোটি টাকার মাছ মরে ভেসে উঠে।

ঢুরিয়ারভিটা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল গণি (৪৫) জানান, কারখানা ও আবাসিক কলোনীর বিষাক্ত বর্জ্য পানির প্রভাবেতার দেড় বিঘা জমিতে এ বছর মাত্র তিন মণ ধান পাওয়া গেছে। পঁচা পানিতে কাজ করে শরীরে নানা অসুখ ধরে, তাই কাজ করার মতো শ্রমিক পাওয়া যায়না।

কৃষক কফিল উদ্দিন জানান, তার তিন বিঘা জমি, আবাদ হয়েছে মাত্র এক বিঘাতে। বাকি জমি পতিত পড়ে আছে। আবাদ করতে গিয়ে পঁচা পানিতে প্রায়ই অসুখে ভোগতে হচ্ছে।

মরে ভেসে উঠে বিল ও পুকুরের মাছ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

কারখানার নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জামালপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা গত বছরের ১১ নভেম্বর কারখানার কর্তৃপক্ষকে আবাসিক কলোনীর ব্যবহৃত বর্জ্য পানি সংরক্ষণের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ করতে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর ৮(৪) উপ-ধারা ৩ মোতাবেক জমিগুলোর প্রাক্কলিত মূল্য হিসেবে কৃষকদের ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯১৪ টাকা ২৫ পয়সা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১২০ কার্য দিবসের মধ্যে টাকা পরিশোধের নির্দেশ থাকায় আগামী ৭ জুলাই সেই সময় সীমা শেষ। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়নি কর্তৃপক্ষ বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ওই এলাকার জমির চাষাবাদসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে কৃষকরা। বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য কারখানার কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান জাভেদ আনোয়ার এ প্রতিবেদককে জানান, যমুনা সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নয় এটি মূলত আবাসিক কলোনির ব্যবহৃত পানি। কারখানার শুরু থেকেই ওইস্থানে পানি ফেলা হয়েছে। আগে কোন সমস্যা ছিলোনা। পাশে বাড়িঘর হওয়াতে এখন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে সমাধানের জন্য তিন একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে পুকুর করে কলোনির পানি ওইখানে নিষ্কাশন করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি জানান।