জামালপুরে চিকিৎসক, নার্স ও শিশুসহ আরও আক্রান্ত ১০, বাড়ছে পারিবারিক সংক্রমণ  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদর উপজেলায় ২৬ মে আরও ১০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের দু’জন চিকিৎসক, একজন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ও আগে আক্রান্ত একজন নারী চিকিৎসকের আঠারো মাস বয়সের ছেলেশিশু ও দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।

এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ২০৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। অন্যদিকে হোম আইসোলেশনে থাকা করোনায় আক্রান্ত রোগীরা পুরোপুরি নিয়ম মেনে না চলার কারণে জামালপুর সদর উপজেলায় একই পরিবারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সদরের ইউএইচএফপিও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৬ মে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রভাষক পদের নারী চিকিৎসক, পুরুষ প্রভাষক পদের একজন চিকিৎসক ও তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ভাতিজা, আগে আক্রান্ত একই কলেজের নারী সহকারী অধ্যাপক পদের একজন চিকিৎসকের আঠারো মাস বয়সের ছেলেশিশু ও তার বাসার গৃহপরিচারিকা, জামালপুর সদর হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স, দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দু’জন সাধারণ পরিবারের সদস্য রয়েছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, ২৬ মে নতুন করে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জামালপুর সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স (৩২) ও শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের এনাটমি বিভাগের নারী প্রভাষককে (৩৭) শহরের একটি আবাসিক হোটেলে, একই মেডিক্যাল কলেজের বায়োক্যামেস্ট্রি বিভাগের একজন পুরুষ প্রভাষক (৩৪) ও তার ভাতিজা জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রকে (১৩) শহরের কলেজ রোডে নিজ বাসায়, ২৪ মে একই মেডিক্যাল কলেজের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া একজন নারী সহকারী অধ্যাপকের আঠারো মাস বয়সের কোলের ছেলেশিশু ও তার বাসার গৃহপরিচারিকাকে (১৬) শহরের খামারবাড়ি এলাকায় নিজ বাসায় আইসোলেশনে, জামালপুর সদর হাসপাতালের পুরুষ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টকে (৩৫) সদর হাসপাতালের আবাসিক ভবনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

এছাড়া ঘোড়াধাপ ইউনিয়নে আক্রান্ত পুরুষ স্বাস্থ্য সহকারীকে (৩০) প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। শাহবাজপুর ইউনিয়নের কৈডোলা এলাকায় আক্রান্ত একজন নারীর (৪৫) লিভারের ইনজুরি থাকায় তিনি সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত নান্দিনা এলাকার এক ব্যক্তিকে (৩২) ফোন করে পাওয়া যায়নি। তাকে খুঁজে বের করে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আনার চেষ্টা চলছে।

জামালপুর সদরের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক মো. লুৎফর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে জামালপুর সদরে একই পরিবারে দুই বা এরও অধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৬ মে নতুন ১০ জনের মধ্যে জামালপুর শহরের শহীদ হারুন সড়কে আগে আক্রান্ত এবং হোম আইসোলেশনে থাকা এক যুবকের সহোদর ভাই মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষক ও তার অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ভাতিজা, শহরের খামারবাড়ি এলাকায় আগে আক্রান্ত হোম আইসোলেশনে থাকা একই কলেজের নারী সহকারী অধ্যাপকের আঠারো মাস বয়সী ছেলেশিশু ও তার বাসার গৃহপরিচারিকার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শেরপুরে শ্বশুরবাড়িতে থেকে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়ে হোম আইসোলেশন ভঙ্গ করে জামালপুর সদরের ঘোড়াধাপ ইউনিয়নে বাবার বাড়িতে অবস্থানরত ডিএমপির এক পুলিশ সদস্যের সংস্পর্শে আসা তার ষাটোর্ধ বয়সের মা ও ১৬ বছর বয়সের ভাতিজা ২৫ মে এবং ২৬ মে একজন স্বাস্থ্য সহকারীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শেরপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ ওই পুলিশ সদস্যকে শ্বশুরবাড়িতে হোম আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু হোম আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করে তিনি জামালপুর সদরের ঘোড়াধাপ ইউনিয়নে তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। ঘোড়াধাপের বাড়িতেও হোম আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করে তিনি করোনা নিয়েই বাড়ির বাইরে স্থানীয় বাজারে এবং যেখানে সেখানে ঘোরাফেরা করার তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে ২৬ মে রাতে তার মা ও ভাতিজাসহ ওই পুলিশ সদস্যকে হোম আইসোলেশন থেকে জামালপুরে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।

করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বাহ্যিক উপসর্গ না থাকায় বা উপসর্গ তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকায় তাদেরকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু তারা হোম আইসোলেশনে থাকার নিয়ম পুরোপুরি না মানায় পারিবারিক সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে বলে জানান ইউএইচএফপিও।