করোনা মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর রাজিব

১ এপ্রিল জামালপুর শহরের পালপাড়ায় নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ ও মাস্ক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিম্নআয়ের এবং কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও শহরে জীবাণুনাশক ছিটানোসহ রাতদিন নানামুখী সচেতনতামূলক কাজ করছেন জামালপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তরুণ কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র রাজিব সিংহ সাহা। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইতিমধ্যে তার কার্যক্রম পৌরবাসীর মাঝে বেশ দৃষ্টি কেড়েছে।

করেনাভাইরাস মোকাবেলায় গত কয়েকদিনে জামালপুর জেলায় সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন নিম্নআয়ের এবং কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষেরা। এই পরিস্থিতিতে জামালপুর পৌরসভার মেয়রের নেতৃত্বে সীমিত পরিসরে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জীবাণুনাশক ছিটানো ছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। পৌরসভা থেকে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার কোনো বরাদ্দও দেওয়া হয়নি। ফলে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও চারটি সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলররা এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও অভুক্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। তবে তারা সামর্থের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে এবং জেলা প্রশাসনের সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল-ডাল বিতরণে ওয়ার্ড পর্যায়ে মানুষের পাশে রয়েছেন বলে কাউন্সিলররা জানিয়েছেন।

তবে ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়ছে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিব সিংহ সাহার ক্ষেত্রে। গত ২৫ মার্চ থেকে তার ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষদের সচেতন করতে মাঠে রয়েছেন তিনি। তার ওয়ার্ডের ছাত্র, তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নামিয়ে দিয়েছেন মাঠে। তারা শহরের প্রধান সড়কসহ ওয়ার্ডের অলিগলিতে দুটি পিকআপে করে ঘুরে ঘুরে বড় ড্রাম থেকে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন। তারা মাইকে প্রচার করছেন করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিধিনিষেধ। শুধু নিজ ওয়ার্ডেই নয় প্রতিটি ওয়ার্ডেই যাচ্ছে তাদের জীবাণুনাশক গাড়ি ও সচেতনতামূলক প্রচার মাইক।

পৌরসভা থেকে বরাদ্দ না পেলেও জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেনের মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দের ৪১০ কেজি চাল পেয়েছেন কাউন্সিলর রাজিব সিংহ সাহা। তার নিয়োজিত একদল স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক খাদ্য বিতরণ করছেন। তারা কর্মহীন ও নি¤œআয়ের পরিবারের তালিকা হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন চাল-ডাল ও মাস্ক। এছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে যে কাউকে এই কাউন্সিলরের ফোনে বা বাসায় সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য শহরে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।

কাউন্সিলরের পদের দায়িত্বের পাশাপাশি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহরিয়ার উজ্জ্বল ও ঠিকাদার সুশান্ত চক্রবর্তী মিঠুকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে তারা তিনজনে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের সেবায় কাজ করছেন রাতদিন। এই তিন বন্ধু মিলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে অন্যান্য ওয়ার্ডেও তারা পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডালসহ সরিষার তেল, লবণ, পেঁয়াজ ও মাস্ক ভরা ত্রাণের ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন তারা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ১ এপ্রিল এই তিনবন্ধুকে জামালপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ায় এবং মুকুন্দবাড়ি এলাকায় ২২২টি পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণের ব্যাগ পৌঁছে দিতে এবং জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা গেছে।

কাউন্সিলর রাজিব সিংহ সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিম্নআয়ের ও কর্মহীন মানুষদের জন্য পৌরসভা থেকে এখনো পর্যন্ত খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেশ ও সমাজের মানুষের কথা ভেবে খাদ্য ও সচেতনতার অভাবে কেউ যেন মারা না যায় সেজন্যই মাঠে রয়েছি। মানবিক দায়িত্ববোধ নিয়েই বন্ধুদের সংগঠিত করে মাঠে রয়েছি। অনুরোধ করছি সবাই ঘরে থাকুন, সেচেতন থাকুন। যখন যেকোনো প্রয়োজনে ডাক দিবেন আমি এবং আমার স্বেচ্ছাসেবক ছেলেরা আপনার বাড়িতে ছুটে যাবে। করোনা মোকাবেলায় এছাড়া বিকল্প পথ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম আরো জোরালো করতে যাচ্ছি। নিজেদের প্রচার চাই না। সংবাদপত্রে আমাদের ছবি ছাপানোর দরকার নাই। সবার সহযোগিতা চাই।’ দেশের মানুষের এই আপদকালে সমাজের বিত্তবানদের যার যার এলাকায় অবস্থান করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।