নকলায় কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণে বিআরডিবি’র সফলতা

শফিউল আলম লাভলু, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের নকলা উপজেলায় কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণে সফলতা পেয়েছেন আবু বক্কর সিদ্দিক আলমগীর (১৬)। সে উপজেলার উরফা ইউনিয়নের লয়খা গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।

মজিবর রহমান পেশায় একজন দিনমজুর। স্ত্রী সন্তানসহ ১১ জনের সংসার তার একার আয়ে চালাতে গিয়ে তিনি চোখে অন্ধকার দেখতেন। তার নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি ছিল না। নয় ভাই-বোনদের মধ্যে আলমগীর চতুর্থ। তার বাবার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। নূন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় অনেক কষ্টে কোন মত সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে আলমগীর। তারপর অভাবের তারণায় বাবার সাথে যখন যেখানে যে কাজ পেয়েছে তাই করেছে।

গত বছরের ৩০ জুনে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহ দেশব্যাপী স্কেলআপ/ বাস্তবায়ন ও আঞ্চলিক পর্যায়ে রেপ্লিকেশনের জন্য একটি বাজেট বরাদ্দ হয়। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (আরডিও) মোশাররফ হোসেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে যাচাই বাছাই করে প্রাথমিকভাবে কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণের জন্য বাছাই করেন আবু বক্কর সিদ্দিক আলমগীরকে। হাসপাতাল মোড়ের মা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ২০১৯ সনের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। একটানা ৯০ দিন প্রশিক্ষণের ফলে গড়ে উঠে দক্ষকারিগর হিসেবে। সরকারিভাবে দেওয়া হয় প্রতিদিন ১৫০ টাকা যাতায়াত ভাতা। এখন তিনি সফল। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কর্তৃক কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে আলমগীর হয়েছে প্রশিক্ষিত। সে এখন সমাজের বোঝা না হয়ে পরিবারের মুখে জোগাতে পারবে অন্ন।

উপকারভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক আলমগীর প্রতিবেদককে বলে, আমি গরীব ঘরের সন্তান। খেয়ে না খেয়ে দিনপার করেছি। আমার পরিবার হতদরিদ্র। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন আমাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষণ করেছি। আমি এখন লোহার আলমিরা, জানালা, দরজাসহ অনেক কিছু বানাতে পারি। আমাদের মত যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছে তাদের যদি সরকার স্বল্প সুদে বড় ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমরা নিজে একটি দোকান দিয়ে পরিবারের মুখে ডাল ভাত তুলে দিতে পারব।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, বিআরডিবি কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সেবার উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। সেখানে ময়মনসিংহের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম উদ্ভাবনী উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। তাঁর সার্বিক পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে আমি নকলা উপজেলায় কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিদারিদ্রতা দূরীকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। উদ্যোগ গ্রহণের মূল চিন্তা ছিল যে কার্যালয়ে গতানুগতিক প্রশিক্ষণে সঠিকভাবে সত্যিকার অর্থে অতিদারিদ্রতা দূরীকরণ হয় না। যদি সঠিকভাবে অতিদারিদ্রতা চিহ্নিত করে সে যে কাজটি শিখতে চায় তাকে সেই কর্মস্থলে প্রশিক্ষণ যেমন হার্ডওয়ার, ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার, সেলাই মেশিন, মটর মিস্ত্রী কাজে দক্ষ করা যায় তাহলে হাতে কলমে শিখে সত্যিকারের আত্মনির্ভশীল ও আত্মকর্মসংস্থান হবে।