দেওয়ানগঞ্জে মৃত নবজাতক কোলে নিয়ে কুমারী মায়ের থানায় মামলা

কুমারী মা, তার স্বজন ও মৃত নবজাতক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মৃত নবজাতক কোলে নিয়ে কুমারী মা ও তার পরিবার থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে বিচার প্রার্থনার জন্য দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহের বাসার সামনে ২২ নভেম্বর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনশন করে ওই পরিবারটি।

সরেজমিন গিয়ে এবং মামলাসূত্রে জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ডালবাড়ী এলাকার প্রদ্যুত নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নয়মাস আগে প্রেমের অভিনয়ে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমানের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মো. রায়হান (১৮)। এক পর্যায়ে রায়হানের হাতে জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয় করে শিশুটি। ধর্ষক মো. রায়হান দেওয়ানগঞ্জ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের ছাত্র। কয়েক দফা ধর্ষণের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে ছাত্রীটি।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ধর্ষণের শিকার ওই মেয়েটির বাবা তার মেয়ের জন্য এলাকাবাসীর কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেন। ওই সময় ধর্ষকের বাবা স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান মেয়েটির গর্ভের সন্তান প্রসবের পর দুজনের বিয়ে সম্পন্ন করাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ওই সময় তিনি পিতাকে ধর্ষণের ঘটনাটিও গোপন রাখার অনুরোধ করেন। এরই এক পর্যায়ে গত ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতক শিশু ও তার মায়ের শারীরিক অবস্থা গুরুতর দেখে ওই রাতেই তাদেরকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এঘটনার দুইদিন পর ২১ নভেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন শিশুটি হাসপাতালেই মারা যায়। এরপর মেয়েটির বাবা ধর্ষকের বাবার নিকট তার মেয়ের বিয়ে ও সুচিকিৎসার দাবী জানালে স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান কিছুই করতে পারবেন না বলে জানান। এতে নিরুপায় হয়ে মৃতশিশু কোলে নিয়ে বিচার প্রার্থনায় ২২ নভেম্বর সকালে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহের বাসার সামনে গিয়ে অনশন শুরু করে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার।

এব্যাপারে বক্তব্য জানতে ধর্ষকের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষক মো. রায়হান এবং তার বাবা স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, অনেক বিলম্বে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ধরনের অমানবিক ঘটনায় দোষীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করা হবে।

এব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহের মুঠোফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম ময়নুল ইসলাম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, মৃত নবজাতক কোলে একজন কুমারী মা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে মামলা করতে থানায় এসেছে। মামলাটি এফআইআর ভুক্তকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই ঘটনা অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজের মানুষ এই দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। শুরুতেই আমাদের কাছে অভিযোগ করা তার পরিবার এবং স্বজনদের দায়িত্ব ছিল।

মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সকল ক্ষেত্রেই আমাদের কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি দেওয়ানগঞ্জের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তার বাবাকেও আইনের আওতায় আনা উচিৎ। মামলা পরিচালনায় জামালপুরের বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘ এই পরিবারটিকে আইনগত সহায়তা প্রদান করবে।