মানসিক প্রতিবন্ধী মা ও নবজাতকের পাশে জেলা প্রশাসক এনামুল হক

জামালপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা মানসিক প্রতিবন্ধী প্রসূতী নীলার গর্ভজাত নবজাতক ছেলের খোঁজ নেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের মেলান্দহ রেলস্টেশনে মানসিক প্রতিবন্ধী নীলা নামের এক নারীর জন্ম দেওয়া ফুটফুটে ছেলে শিশু ও ওই নারীর স্থান হয়েছে জামালপুর সদর হাসপাতালে। ১ নভেম্বর শিশুটিকে ঢাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমণি পুনর্বাসন কেন্দ্রে এবং তার মা নীলাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ৩১ অক্টোবর বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে নবজাতক ও প্রসূতীর খোঁজখবর নেওয়ার পর শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন।

জানা গেছে, মানসিক প্রতিবন্ধী প্রসূতী নীলা (৩০) ২৯ অক্টোবর সকালে জামালপুরের মেলান্দহ রেলস্টেশনে উন্মুক্ত স্থানে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। তিনি স্থানীয়দের কাছে নীলা পাগলী বলে পরিচিত। তার আর কোনো পরিচয় কারো জানা নেই। নিজের গর্ভজাত হলেও ওই নারী তার শিশু সন্তানকে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছিলেন না। স্থানীয়রা বিষয়টি মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামিম আল ইয়ামিনকে জানান। তিনি খোঁজখবর নিয়ে মেলান্দহ থানায় জানান। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক সিদ্দিকী দ্রুত রেলস্টেশন থেকে নবজাতক ও প্রসূতীকে উদ্ধার করে মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। ইউএনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাদের খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা বেশ যত্ন সহকারে শিশুটির পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেন।

মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামিন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মেদ ও জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্য মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টায় প্রসূতী নীলা ও তার নবজাতক ছেলেকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। শিশুটিকে বর্তমানে হাসপাতালের চারতলায় শিশু ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। শিশুটির মা নীলার স্থান হয়েছে হাসপাতালের প্রসূতী ওয়ার্ডে।

এদিকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বেশ কয়েকজন দম্পতি ফুটফুটে এই শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক মনে করছেন দত্তক বিষয়টি আইন-আদালতের বিষয়। তাই সেটা পরে দেখা যাবে। ৩১ অক্টোবর বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক নবজাতক ও তার মাকে দেখতে জামালপুর সদর হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি শিশু ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে রাখা সেই নবজাতককে দেখেন এবং তার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। একই সাথে শিশুটির মাকেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশনা দেন।

জামালপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে মানসিক প্রতিবন্ধী প্রসূতী নীলার গর্ভজাত নবজাতক ছেলে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক তার কার্যালয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে নবজাতক ও তার মায়ের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা হাকিম সুহেল মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াছমীন, মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামিন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাজু আহমেদ, সহকারী পরিচালক আবু ইলিয়াস মল্লিক, জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক এ কে এম শফিকুজ্জামান, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগে পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, মেলান্দহ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মেদ, জেলা শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা জ্যোৎস্না আক্তার প্রমুখ ।

ওই বৈঠকে নবজাতক শিশুটিকে ১ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমণি’ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য জেলা সমাজেসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা আব্দুস সালামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সাথে নবজাতক শিশুটির মা মানসিক প্রতিবন্ধী নীলাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য মেলান্দহের ইউএনও তামিম আল ইয়ামিন ও মেলান্দহ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ফারুক আহাম্মেদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ওই নবজাতক ও তার মায়ের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘শিশুটিকে দত্তক নিতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কিন্তু আপাতত: এখনই দত্তক বিষয়ে কোনো কিছু ভাবছি না। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। দেখলাম শিশুটি বেশ ফুটফুটে এবং চিকিৎসকরা জানালেন সে বেশ সুস্থ আছে। তাকে এবং তার মাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় নবজাতক শিশুটিকে ঢাকায় ছোটমণি পুনর্বাসন কেন্দ্রে এবং শিশুটির মা নীলাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’