জামালপুরে সেনাবাহিনীতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ধরা এক প্রতারক

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার প্রতারক মোশারফ হোসেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন মো. মোশারফ হোসেন (৩৭) নামের একজন প্রতারক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাকে ৯ অক্টোবর দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল। তিনি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারী ইউনিয়নের চিনারচর গ্রামের মো. ছাহের আলীর ছেলে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলা সদরের কামারেরচরের গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক মো. দুলাল উদ্দিনের এইচএসসি পাস ছেলে লিটন মিয়াকে সেনাসদস্য পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রথমে এক লাখ টাকা নেন প্রতারক মোশারফ হোসেন। পরবর্তীতে চাকরিতে নিয়োগপত্র হাতে দিয়ে লিটন মিয়ার কাছ থেকে আরো ৯ লাখ টাকা নেন। তার নিয়োগপত্রে সেনাবাহিনীর ঢাকাস্থ সদর দপ্তরের মেজর ও লে. কর্নেল পদমর্যাদার দুজন সেনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়োগপত্র নিয়ে ওই নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকা গত ২৬ জানুয়ারি নির্ধারিত দিনে সকাল ৮টার মধ্যে ইবিআরসি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে গিয়েছিলেন লিটন মিয়া। সেনানিবাসের প্রধান ফটকে তার ওই নিয়োগপত্র দেখে সন্দেহ হলে কর্তব্যরত সেনাসদস্যরা তাকে ভেতরে যেতে দেননি।

পরে লিটন মিয়া দ্রুত সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে তার স্বজনদের ঘটনা জানান। পরবর্তীতে প্রতারক মোশারফের সাথে যোগাযোগ করলে ফের চাকরির চেষ্টা করবে বলে কালক্ষেপণ করেন। কিন্তু ১০ লাখ টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতারক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে জামালপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন লিটন মিয়া। ওই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই মোশারফ হোসেন এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের উপপরিচালক মো. তোফায়েল আহমেদ মিয়া। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

ভুক্তভোগী লিটন মিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের উপ-পরিচালক ও পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমেদ মিয়ার নির্দেশে স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার জোনাঈদ আফ্রাদ এবং সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম তদন্তকালে জানতে পারেন প্রতারক মোশারফ হোসেন ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বিদেশেও পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। র‌্যাবের আভিযানিক দলটি প্রযুক্তির সহায়তায় ৯ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার আওতাধীন খানটেক মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতারক মোশারফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জামালপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

এদিকে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক মোশারফ হোসেন সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লিটন মিয়ার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। শুধু লিটন মিয়ার কাছ থেকেই নয়, আরও ১১ জন যুবকের নাম-পরিচয়সহ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়ার কথাও স্বীকার করেছেন মোশারফ। র‌্যাব সেগুলো নিয়ে তদন্ত করে দেখছে। এছাড়াও সেনাসদস্য পদে চাকরির নিয়োগপত্র কোথায় ছাপানো হয়েছে এবং তাকে এই জ্বালিয়াতিতে কারা কারা সহযোগিতা করেছেন, এসব বিষয় নিয়েও র‌্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন মোশারফ।

র‌্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের উপ-পরিচালক মো. তোফায়েল আহমেদ মিয়া ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় শহরের বেলটিয়ায় তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, আটক মোশারফ হোসেন পেশায় একজন দর্জি। একটি প্রতারকচক্রের সহায়তায় তিনি তার এলাকা ইসলামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যুবকদের সেনাসদস্য পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর প্রতারক চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার মোশারফ হোসেনকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামপুর থানায় সোপর্দ করা হবে।