উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর চাপে এলাকা ছাড়ছেন হুইপ আতিক

জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিহাজ উদ্দিন মিনাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রার্থীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকার দলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিকের শেরপুর ত্যাগের দাবিতে এবার জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৮ অক্টোবর বিকালে প্রায় সহস্রাধিক কর্মী-সমর্থক নিয়ে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী ওই কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিহাজ উদ্দিন মিনাল। একইসাথে তিনি হুইপ কন্যা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা চিকিৎসক শারমিন রহমান অমি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলামের ছেলে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী ছায়েদুল ইসলাম শাওনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলা হয় ওই ঘেরাও কর্মসূিচতে।

৯ অক্টোবরের মধ্যে হুইপ আতিক শেরপুর ত্যাগ না করলে এবং তার কন্যা চিকিৎসক অমি ও প্রার্থীপুত্র শাওন নির্বাচনী র্কমকান্ড থেকে বিরত না হলে বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ১০ অক্টোবর পুনরায় জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাওসহ কঠিন কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মিনাল। পরে হুইপ আতিক আগামী ১০ অক্টোবর এলাকা ত্যাগ করে চলে যাবেন- জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রার্থী মিনাল অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। আগামী ১৪ অক্টোবর ইভিএম পদ্ধতিতে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিহাজ উদ্দিন মিনাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এদিকে জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাওকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অফিসের ভেতরে বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি’র সাথে কথা বলা হয়। এ সময় আগামী ১০ অক্টোবর হুইপ আতিক শেরপুর ত্যাগ করার আশ্বাস দিলে মিনাল সমর্থকরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনাল বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, হুইপ আতিক ১০ অক্টোবর শেরপুর ত্যাগ করবেন। তার মেয়ে চিকিৎসক অমিকে ওই বিষয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি দুই দিনের জন্য স্থগিত করেছি। যদি এর মধ্যে কোন কার্যকর পদক্ষপে নেওয়া না হয়, তাহলে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে আবারও নির্বাচন অফিসের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা বলেন, আমরা হুইপ আতিক মহোদয়ের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সকল সরকারি কর্মসূচি স্থগিত করে ১০ অক্টোবর শেরপুর থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্থ করেছেন। হুইপের মেয়ে চিকিৎসক শারমিন রহমান অমির ব্যাপারে আনা অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে চিঠি দিয়ে তাকে সর্তক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তার ব্যাপারে পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজিকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনাল এবং তার সমর্থকদের বিষয়গুলো অবহিত করলে তারা অবস্থান র্কমসূচি প্রত্যাহার করে নেন।

জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিহাজ উদ্দিন মিনাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

প্রসঙ্গত, এর আগে একই দাবিতে শেরপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মলন করেন বিদ্রোহী প্রার্থী মিনাল। তার অভিযোগ, হুইপ আতিক সরকারি সুবিধাভোগী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়েও গত ৩ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি সফরের নামে শেরপুর সদরে অবস্থান করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেন। এবং শহরের চকবাজার এলাকার দলীয় কার্যালয় এবং বাড়িতে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকসহ নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়া হুইপকন্যা চিকিৎসক শারমিন রহমান অমি ও প্রার্থীপুত্র ছায়েদুল ইসলাম শাওন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নৌকার পক্ষে সরাসরি ভোট চাইছেন- যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে সেদিনই কন্যা অমসিহ তার বিরুদ্ধে আনা আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেন হুইপ আতিউর রহমান আতিক।