দেওয়ানগঞ্জে দেড় মণ ধানেও মিলছে না এক শ্রমিক

দেওয়ানগঞ্জে কৃষকরা হতাশা মনে ধান শুকাচ্ছেন। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মদন মোহন ঘোষ, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

মুখে হাসি নেই, হতাশায় পরেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কৃষক। নগদ টাকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে বোরো ধান বিক্রি করছেন, দু’মণ ধানেও এক শ্রমিক মিলছে না। বোরো চাষ করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চরম শ্রমিক সংকট, ব্লাস্ট রোগ, ধানে চিটা এবং ব্যাংক ঋণ থাকায় কৃষক হতাশায় পরেছেন।

যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী পাহাড়ের নিচু এলাকায় শ্রমিক বেশি পাওয়া যেত। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিক যেত কাজের জন্য। সেই দেওয়ানগঞ্জের শ্রমিক সংকটের কারণে সময়মত ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। এদিকে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। দুই মণ ধানের দামেও পাচ্ছেন না একজন শ্রমিক। পাকা ধান নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গড়ে ৫৪ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন বোরো ধান উৎপাদিত হবে। কৃষি অফিস ও বোরো চাষীদের হিসাবমতে প্রতি বিঘায় শ্রমিক, রোপণ, নিড়ানী, বীজ, বীজতলা, সার-কীটনাশক, সেচ ইত্যাদি খরচ হিসাবে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমান বাজারে কৃষক ধান বিক্রি করছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে। প্রতি বিঘায় উৎপাদিত ধান ৩ হাজার ২৫০ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করছেন কৃষক।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫ মে দুপুরে পৌর শহরের হাটে চর কালিকা পুরের বোরো চাষী শফিকুল ও রাজু বলেন, ‘ইবে গুনাগারি (লোকসান) দিয়ে ধান আবাদ করবের নুই, দু’বেলা খাওন দিয়ে কামলাক দেয়া লাগে ৭০০ টিহা।’ পাশে থাকা অপর কৃষক রাজু বলেন, ‘সামনে বছর নিজেগো খুরাকির যে জল্লা ধানের দরকার ওই জল্লায় আবাদ করমু।’

জানা যায়, শ্রমিক প্রতি মজুরী দিতে হচ্ছে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা, সঙ্গে দুই বেলার পছন্দের খাবার, এতে ধান কাটতেই প্রতি মণ খরচ হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, অন্যান্য খরচতো আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ফলন আশাতিত হলেও সব এলাকায় ব্লাস্ট রোগ, ধান চিটা, পোকা মাকড় রোগ বালাই নিয়ে চিন্তিত কৃষক। এছাড়া মহাজনদের থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে বর্গাচাষীরা পড়েছে মহা বিপদে। কৃষকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেও ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত। এবছর সরকার প্রতিকেজি চাল ৩৬টাকা গম ২৮ টাকা ও ধান ২৬ টাকায় নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে প্রতিমণ ধানের দাম পরছে ১হাজার ৪০টাকা। কিন্তু কৃষকরা কখনও সরকারি সুবিধায় ধান বিক্রি করতে পারে না। ধান চলে যায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের গোলায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, সরকারি নির্ধারিত দামে পেলে কৃষক ধান চাষে উৎসাহিত হবে এবং ধান বিক্রিতে লাভবান হবে।