একনেকে শেখ হাসিনা নকশি পল্লী প্রকল্পে ৭২২ কোটি টাকা অনুমোদন

মির্জা আজম

আলী আকবর, নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে ‘জামালপুর শেখ হাসিনা নকশি পল্লী’ প্রকল্প। ১২ মার্চ রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সম্মেলন কক্ষে (একনেক) চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় শেখ হাসিনা নকশি পল্লীর প্রথম পর্যায়ে মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন।

৩০০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হবে শেখ হাসিনা নকশি পল্লী। এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশের একমাত্র এই নকশি পল্লীতে থাকবে ফাইভস্টার হোটেল, প্রশিক্ষণ সেন্টার, লেক, পার্কসহ দেশি বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা। এ ছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই শিল্পের সাথে জড়িত বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। প্রসার ঘটবে জামালপুরসহ সারা দেশের নকশি শিল্পের।

নানা প্রতিকূলতা ও পুনর্বাসনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী নকশি শিল্প। তাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব শিল্প ও শিল্পীদের একই ছাদের নিচে আনার উদ্যোগ নিতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাঁত বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্যাবলী সম্বলিত নকশি কাঁথার চাহিদা দেশব্যাপী। নকশিকাঁথা জামালপুর জেলার ব্র্যান্ড হিসেবে আখ্যায়িত। জামালপুরের বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এবং সদর উপজেলাতেই নকশিকাঁথা কমবেশি উৎপাদন হয়। জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী এই নকশিকাঁথা শুধু বাংলাদেশে নয় ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বের বাজারে। বর্তমানে জামালপুরের সবগুলো উপজেলাতেই এ শিল্পের কাজ হচ্ছে।

জামালপুরে অন্তত ৩০০ প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে নকশি শিল্পের। এই শিল্পের সাথে জড়িত অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। পাশের শেরপুর জেলায় ৭৬ জন নকশি উদ্যোক্তা এবং তিন হাজার ৯৮৫ জন নকশি শিল্পী রয়েছেন। জামালপুরের সদর উপজেলার শরিফপুর, দিগপাইত, মেষ্টা ও তিতপল্লা ইউনিয়ন এবং বকশিগঞ্জে বর্তমানে কিছু তাঁতি রয়েছেন। জামালপুর ও শেরপুর জেলায় প্রায় ২৬১টি তাঁত পরিবার বসবাস করে। ৩০৫টি পিট বা চিত্তরঞ্জন ও ২০০টি জামদানি তাঁত বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে এলাকায় এ শিল্পটির তেমন প্রসার ঘটেনি।

বর্তমানে এ শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা আর্থিক, বিপণন সমস্যা এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ব্যবসায় প্রসারের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হলে একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অনুমোদন দেন। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাইকারি ক্রেতারা শেখ হাসিনা নকশি পল্লী থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত নকশি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, প্রকল্পটি ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন পাওয়ায় তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। শেখ হাসিনা নকশি পল্লীতে যাতায়াত সহজ করতে ঝিনাই নদীর ওপর একটি সেতু ও কানেকটিং সড়ক নির্মাণ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। বিআইডাব্লিউটিএ ঝিনাই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন কাজ করবে।

জামালপুরে শেখ হাসিনা নকশি পল্লী প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়ায় জামালপুরবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জামালপুরের কৃতী সন্তান মির্জা আজমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জামালপুরবাসী।