জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের দু’পক্ষের হামলায় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত দু’জন চিকিৎসকসহ আটজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে জরুরি বিভাগের পাঁচজন কর্মচারী এবং বহিরাগত একজন রয়েছেন। একজন নারী রোগীর পারিবারিক কলহের জের ধরে ২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীর শ্বশুর গাড়িচালক সেখ সাদীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই চিকিৎসকসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আহত কর্মচারীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েক ঘন্টা ধরে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

জানা গেছে, জামালপুর শহরের বন্দেরবাড়ি এলাকার মৃত মো. সুমনের মেয়ে সুমনা পারভীনের দু’বছর আগে বিয়ে হয় জামালপুর সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনার অনন্তবাড়ি গ্রামের সেখ সাদীর ছেলে রনির সাথে। বিয়ের পর থেকেই সুমনা আর রনির মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। ২৪ অক্টোবর রনি তার স্ত্রী সুমনাকে নির্যাতন করলে সুমনা বাবার বাড়িতে চলে যায়। ২৫ অক্টোবর সকালে আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে সে তার বড় দুই ভাই মিল্টন ও আমিনুলকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে জামালপুর জেলা জজ আদালতে যায়। মামলা ফেরাতে সুমনার শ্বশুর সেখ সাদী তার দুই ছেলে রনি ও জনিকে নিয়ে তারাও আদালতে যায়। সেখানে তাদের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রনি ও জনি ক্ষীপ্ত হয়ে সুমনা ও তার দুই ভাইকে মারধর করে।

এরপর সুমনা সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার দুই ভাই মিল্টন ও আমিনুলকে নিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে যায় চিকিৎসার জন্য। তারা রোগীর টিকিট কিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুল বারী শিশিরের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় সুমনার শ্বশুর, স্বামী রনি ও তার ভাই জনি হাজির হলে তাদের সাথে ঝগড়া বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে সুমনার দুই ভাই মিল্টন ও আমিনুল সুমনার শ্বশুর সেখ সাদীর ওপর হামলা চালায়। দু’পক্ষে তুমুল মারামারির সময় দু’জন চিকিৎসকসহ জরুরি বিভাগের কর্মচারীরা মারামারি থামাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা হয়।

হামলায় সুমনার শ্বশুর সেখ সাদী গুরুতর আহত হলে তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া হামলায় আহত চিকিৎসক আল্লামা ইকবাল ও চিকিৎসক হাসানুল বারী শিশির, জরুরি বিভাগের ব্রাদার আব্দুর রফিক, আল আমিন ও আব্দুস সালাম, ওয়ার্ড বয় মোজাফফর হোসেন ও আমিরুল ইসলাম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ দিকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে জরুরি বিভাগের কেচিগেট ও দরজা বন্ধ করে হামলাকারী দুপক্ষের রনি, জনি, মিল্টন ও আমিনুলকে আটক করে থানায় খবর দেয় হাসপাতালের কর্মচারীরা। সদর থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ হামলার ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সকল বিভাগের কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ঘটনার পর থেকে জরুরি বিভাগে প্রায় পাঁচ ঘন্টা চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মো. সিরাজুল ইসলাম এ ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগের ভেতরে রোগীদের দু’পক্ষের হামলার ঘটনায় চারজনকে আটক করে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ একই সাথে তিনি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তার সার্থে এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের ব্যাপারেও সদর থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছিমুল ইসলাম বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত রনি, জনি, মিল্টন ও আমিনুলকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। হামলার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাকারীরা কোনো ডাক্তার বা কর্মচারীর ওপর হামলা করেনি। তারা মারামারি ফেরাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। ঘটনার মীমাংসার প্রক্রিয়া চলছে। মীমাংসা না হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।