মেলান্দহে অটো রাইস মিলের বয়লার বিস্ফোরণে দু’জন নিহত

মেলান্দহে কেয়া অটো রাইস মিলের বিস্ফোরিত বয়লার। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর ॥
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় একটি অটো রাইস মিলের বয়লার বিস্ফোরণে দু’জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ১৫ জুলাই সকালে উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের কেয়া অটো রাইস মিলে এ বিস্ফোরণের ঘটে।

নিহতরা হলেন রাইস মিলের প্রধান মিস্ত্রি আব্দুল করিম (৪৫) এবং তার সহকারী শ্রমিক মো. মিন্টু (৩৫)। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে জামালপুর মর্গে পাঠিয়েছে। বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরেক জন মিস্ত্রি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গেছেন এবং পাশের একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই বাড়ির একশিশুসহ দু’জন লোকও অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।

জানা গেছে, মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের বাঘাডোবা গ্রামে ১৫ জুলাই সকালে আবুল কালাম আজাদের কেয়া অটো রাইস মিলটি চালু করার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় মিলের প্রধান মিস্ত্রি আব্দুল করিম ও মিস্ত্রি শহিদুর রহমান বয়লারের চুলা জ্বালিয়ে মিল চালু করার সাথে সাথে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরিত হয়। এতে বয়লারসহ মিলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। মিলের কিছু অংশে আগুনও ধরে যায়। এতে মিলের ভেতরে প্রধান মিস্ত্রিসহ তিনজন আটকা পড়েন।

খবর পেয়ে মেলান্দহ ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা এবং মেলান্দহ থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। তারা মিলের ভেতরে আটকাপড়া শ্রমিকদের মধ্যে প্রধান মিস্ত্রি আব্দুল করিম ও তার সহকারী মো. মিন্টুকে মৃত এবং শহীদুর রহমান নামের অপর এক মিস্ত্রিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পুলিশ নিহত মিস্ত্রি আব্দুল করিমের বাড়ি শেরপুর জেলায় বলে জানিয়েছে। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। নিহত মো. মিন্টু মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। নিহত দু’জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্ফোরিত বয়লারটি এবং মিলের ভেতরের যন্ত্রাংশ ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। উৎসুক হাজার হাজার জনতা সেখানে ভিড় করেছেন। স্থানীয়রা জানালেন, বিস্ফোরণের সময় প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে মাটি কেঁপে উঠে এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বয়লার বিস্ফোরণের সময় প্রচণ্ড শব্দে এবং মিলের যন্ত্রাংশ ছিটকে গিয়ে মিলের পাশের বাড়ির ঘরের টিনের চাল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এ সময় বাড়ির মালিকের ছেলে সোহেল রানা ও তার এক শিশু সন্তান অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাড়ির অন্তত ১০ জন সদস্য বাড়িতে ছিলেন না। বিকট শব্দে এবং ভয়ে সোহেল রানা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় বাঘাডোবা গ্রামের জনবসতি এলাকায় এই রাইস মিলটি ২০০২ সালে স্থাপিত হয়। দীর্ঘদিনের পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ এই মিলটি চালু রাখার অযোগ্য হয়ে গেলেও মালিক আবুল কালাম আজাদ ঝুঁকি নিয়েই এটি চালু রাখেন। ১৫ জুলাই বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনার পর মিল মালিক গা ঢাকা দিয়েছেন। মিল সংলগ্ন তার বাসভবনে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘নিহত মিস্ত্রি আব্দুল করিমের সঠিক ঠিকানা জানার চেষ্টা করছি। দু’জনের লাশ জামালপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সামিউল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এই মিলটি অনেক পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় হয়তো এ বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। তাছাড়া মিলটি জনবসিত এলাকায় এবং এর চারদিকে কোনোরূপ সীমানা দেয়ালও নেই। এরকম একটি ভারি শিল্প চালানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই সেখানে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। মিল মালিকের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *