নিরাপদ হোক ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা

সৈয়দ ফারুক হোসেন : ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে নগরবাসী এখন গ্রামমুখী। নাড়ির টানে মুক্তির ছোঁয়ায় যেন এক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই। নানা ধরনের কর্মব্যস্ততা ও উন্নত জীবন ধারার জন্য গ্রামের মানুষ শহরে বসবাস করলেও ঈদে সবারই থাকে বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ। গ্রামে ফিরতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় নগরবাসীর। টিকিট ভোগান্তি, টিকিট পেলেও কয়েকগুণ বেশি দাম, যানজটসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দুই ঈদে গ্রামে যান। এত মানুষের একসঙ্গে ঘরে ফেরার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা।

প্রতিবছরই ঈদে নগরবাসী মানুষের বাড়ি ফেরার সময় পড়তে হয় নানা রকম ভোগান্তিতে। অনেকের তো বাড়িই ফেরা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত যানজটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতেই থাকে। ঈদকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের নিরপত্তার কথা চিন্তা করে নিয়মমাফিক অতিরিক্ত পরিবহন সেবা চালু করা সব সময়ের দাবি। পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের জন্য নিয়মিত রাস্তাঘাট মেরামতসহ গতিবিধি মেনে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করতে পারলে অনেকাংশেই দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে। গতিবিধি না মেনে গাড়ি চালালে তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে।

ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সব স্তরের মানুষের মাঝে, ঈদে বাড়ি ফেরার যাত্রা হোক নিরাপদে। প্রতি ঈদে নাড়ির টানে মানুষ নিজ বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে যায়। কারণ বছর শেষে আনন্দের দিনটি সবাই একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষেও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে মানুষ ছুটছে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু আমাদের দেশের সড়কগুলো যেন হয়ে উঠছে এক একটি মৃত্যু ফাঁদ। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো সড়কপথ। অধিকাংশ মানুষ সড়কপথেই যাতায়াত করতে পছন্দ করেন। অবশ্য তাদের কাছে দ্বিতীয় কোনো পছন্দও নেই বলা চলে। কর্মব্যস্ত নগরী থেকে কিছু দিনের জন্য হলেও প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে চিরচেনা সেই নিজ বাড়িতে ছুটে যায় তারা।

মূলত নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আসল যুদ্ধ শুরু হয় পবিত্র ঈদ আসলেই। এই সময় আনন্দযাত্রা ভোগান্তি দিয়েই শুরু হয় মানুষের। যারা বাসে চড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হয় মহাসড়কে। যত কষ্টই হোক না কেন নিজের জন্মস্থান, গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনে উদগ্রীব মানুষগুলো ছুটে আসছেন নিজ গন্তব্যে। পথে যতই ভোগান্তি ও দুর্ভোগ হোক না কেন পরিবার-স্বজনদের দেখা মিললে নিমিষেই মুছে যায় সকল ব্যথা। ঈদের এই মুহূর্তে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। এ দুই উৎসবে রাজধানী ও অন্যান্য শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ নাড়ির টানে পরিবার-পরিজনসহ গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও এর ব্যতিক্রম হবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতি বছর ঈদ উৎসবের আগমুহূর্ত থেকেই ঘরমুখী মানুষের মনে নিরানন্দের সুর ধ্বনিত হতে দেখা যায়। টিকিট কালোবাজারি, যানজট, ছিনতাই-ডাকাতি ও চাঁদাবাজি, জাল নোট, সড়ক ও লঞ্চপথে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে রাস্তা অবরোধসহ বিভিন্ন ঘটনায় জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। অতীতের ঘটনা থেকে প্রমাণিত- দেশের কোনো পথই ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ- ঈদের আগে কোথাও স্বস্তির কোনো চিত্র পরিলক্ষিত হয় না। ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ট্রেন, বাস ও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি, ঈদের আগে পরে কয়েক দিন মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক-লরি নিষিদ্ধ করা, ফেরিঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি, রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার ইত্যাদি। আমাদের সব ক্ষেত্রে দায়িত্বে গাফিলতির ভাব থেকেই যাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে কোনো কিছুই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। নিজ নিজ দায়িত্ব বোধ থেকে আমাদের এসব দুর্ঘটনা রোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসা উচিত।

দুর্ঘটনা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। হয়ত অনেকটা অজান্তেই সামনে চলে আসে আর ধ্বংস করে দেয় জীবন বা জীবনের ভবিষ্যৎ। দুর্ঘটনা জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটু অসাবধানতার আভাস পেলেই হুটহাট করে সামনে চলে আসে। যখন আর কিছুই করণীয় থাকে না। কিন্তু যার যা করণীয়টুকু নিয়ে যদি দুর্ঘটনার পূর্বেই কিছু ভাবা যায় তা হল সচেতনতা। একটু সচেতনতা আমাদেরকে বাঁচাতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব দুর্ঘটনার হাত থেকে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ এ দুর্ঘটনা দীর্ঘদিন থেকে ঘটে আসছে। গবেষণা বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, চালকদের অশুভ প্রতিযোগিতা, নৌপথে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর না করা, নৌযান চালকদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, অদক্ষতা, ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করার ‘সুযোগ’ পাওয়াসহ বিভিন্ন নৌযানে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করাই হচ্ছে এসব নৌ-দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। দেশের নৌপথগুলোতে প্রতি বছর ঘটে চলা দুর্ঘটনাগুলো কি দেশের জনগণের কপালের লিখন নয়। নৌযান চালকদের আরোও সাবধানতা এবং সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে যে তাদের একটু অসাবধানতা কেড়ে নিতে পারে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের প্রাণ।

দুর্ঘটনায় যারা মারা যান তারা একেবারেই চলে যান, যারা আহত হন তারা হয়তো পরবর্তীতে সুস্থ হন। কিন্তু যাদের অঙ্গহানি ঘটছে তাদের বাকি জীবনে আর সুস্থ হওয়ার বা হারানো অঙ্গ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাদের জীবনটা নির্মম হয়ে পড়ে। সড়ক দুর্ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হল চালকদের বেপরোয়া মনোভাব এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক। ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। ভোগান্তি এড়াতে নাড়ির টানে পদ্মা সেতু হয়ে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তির অবসানে হাসি ফুটেছে কোটি মানুষের মুখে। বাংলাদেশের ধমনী প্রমত্ত পদ্মা অক্ষয় রূপ নিয়ে নিজের বিশালত্ব, সৌকর্য, শৌর্য ও সৌন্দর্যের এক মূর্ত প্রতীক। আমাজনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মাকে বশীকরণ করে জেগে উঠেছে স্বপ্নের সেতু। যে সেতু বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের অহংকার, আবেগ ও আভিজাত্যের জৌলুশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় নেতৃত্ব, দৃঢ় সংকল্প ও স্থির প্রতিজ্ঞায় স্বপ্ন এখন বাস্তব।

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ প্রতি বছরের নিয়মিত চিত্র। একেক বছর কারণে ভিন্নতা থাকলেও যাত্রীরা রেহাই পায় না দুর্ভোগ থেকে। সবচেয়ে বেশি জরুরি সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। এখন থেকেই সড়কগুলোর ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে পারলে হয়ত দুর্ভোগ কম হবে। আনন্দের ঈদযাত্রা যেন বিষাদে পরিণত না হয়, এই প্রত্যাশা সকলের।

বর্তমানে পবিত্র রমজান মাস চলছে। আর ক’দিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ। তাই একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে। কর্মের তাগিদে বড় বড় শহরগুলোতে মানুষের বাস বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। যেখানে লোক সমাগম অন্য জেলা থেকে অনেক বেশি। ঢাকাই হচ্ছে মানুষের প্রাণ কেন্দ্র। তাই ঢাকাকে ঘিরে লাখো মানুষের কর্ম জড়িত। এতে ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরেফেরার মানুষের ঢল নামে সড়ক, নৌ ও রেলপথে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদে প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন করতে ছুটি পেয়ে নারীর টানে বাড়ি ফিরতে সকলে দৌড় আসে নিজ বাড়িতে।

এদিকে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অপর্যাপ্ত যানবাহন ও অদক্ষ গাড়িচালকের কারণে প্রতিবছর শুধু ঈদকে কেন্দ্র করে রেকর্ড সংখ্যাক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যার দায় এড়িয়ে যান সবাই। দুর্ঘটনা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এমন কোনো দিন নেই যে, দেশের মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে না। হয় বাস দুর্ঘটনা, না হয় ট্রেন অথবা নৌ দুর্ঘটনার অসহায় শিকার হচ্ছে মানুষ। কেবল তাই নয়, যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা ছাড়াও নিজ কর্মরত প্রতিষ্ঠানে অথবা বাসাবাড়িতেও মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সবাই যেন নিরাপত্তাহীন। মৃত্যু অনিবার্য, এটা চিরন্তন সত্য বটে। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু তো মেনে নেওয়া কঠিন। তাই একটা কথাই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের সবাইকে বিবেচনা করতে হবে।

নানা দুর্ভোগ পেরিয়ে নাড়ীর টানে ছুটে যাচ্ছেন আপন নীড়ে পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আন্দন উপভোগ করতে।দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকলেও ভেঙে ভেঙে গাড়িতে পাড়ি জমিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুঁটে যাচ্ছেন পারিবারিক সদস্যদের ভালোবাসার টানে।ঈদের সুখ ভাগাভাগি করতে। মূলত পবিত্র ঈদ আসলেই আনন্দযাত্রা ভোগান্তি দিয়েই শুরু হয় মানুষের। যারা বাসে চড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে থাকতে হয় মহাসড়কে।যত কষ্টই হোক না কেন নিজের জন্মস্থান, গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপনে উদগ্রীব মানুষগুলো ছুটে আসছেন নিজ গন্তব্যে। পথে যতই ভোগান্তি ও দুর্ভোগ হোক না কেন পরিবার-স্বজনদের দেখা মিললে নিমিষেই মুছে যায় সকল ব্যথা। ঈদের এই মুহূর্তে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। এ দুই উৎসবে রাজধানী ও অন্যান্য শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ নাড়ির টানে পরিবার-পরিজনসহ গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে।আসন্ন ঈদুল ফিতরেও এর ব্যতিক্রম হবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতি বছর ঈদ উৎসবের আগমুহূর্ত থেকেই ঘরমুখী মানুষের মনে নিরানন্দের সুর ধ্বনিত হতে দেখা যায়।

টিকিট কালোবাজারি, যানজট, ছিনতাই-ডাকাতি ও চাঁদাবাজি, জাল নোট, সড়ক ও লঞ্চপথে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে রাস্তা অবরোধসহ বিভিন্ন ঘটনায় জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে।অতীতের ঘটনা থেকে প্রমাণিত- দেশের কোনো পথই ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ- ঈদের আগে কোথাও স্বস্তির কোনো চিত্র পরিলক্ষিত হয় না।নির্ঝঞ্ঝাট ও নিরাপদ ভ্রমণের প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ টিকিটের জন্য বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে ভিড় জমায়। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাক্সিক্ষত গন্তব্যের টিকিট পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। এবারের ঈদে পূর্বের সেই পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: রেজিস্ট্রার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর