জামালপুরে শিশুদের জীবন দক্ষতা শিক্ষা : এপির একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

শিশুদের নিয়ে অধিবেশনে পর্যবেক্ষণে আসা এপির ব্যবস্থাপক, সিডিও।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জাহাঙ্গীর সেলিম:
‘সবার আগে শিশু, এই নীতিতে অটল থেকে ভাববো সকল কিছু’ এ ছড়া গানে শুরু হয় শিশুদের নিয়ে আয়োজিত জীবনদক্ষতা অধিবেশন। ছায়াযুক্ত বাড়ির উঠানে পরিচালিত শিশুবান্ধব ভাষা ও অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে অধিবেশন সহায়কের দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় বাসিন্দা নাদিয়া তাবাসসুম নামে এক শিক্ষিত মেয়ে।

জামালপুর পৌরসভাধীন বগাবাইদ গ্রামের এক কোলাহলমুক্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশে অনুষ্ঠিত অধিবেশন দেখতে ১৬ মার্চ সরেজমিনে যাওয়া হয়। আদাবের সাথে অতিথিদের অভ্যর্থনা এবং সালাম বিনিময়ের ধরন দেখেই অধিবেশনে অংশ নেয়া শিশুদের ইতিবাচক আচরণের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

সহায়কের পাঠদান কৌশল দেখে মনে হয় উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে সে এ দায়িত্ব পালন করছেন। জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রাম (এপি) এর আওতায় সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে নাদিয়া তাবাসসুম শিশুদের জীবন দক্ষতা শিক্ষা অধিবেশন পরিচালনা করছে। ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুরা এ অধিবেশনের অংশগ্রহণকারী। তাদের নিয়ে ১৬ সপ্তাহে ১৬টি ইস্যু নিয়ে অধিবেশন চালানো হবে। প্রতি অধিবেশনে সময় হবে ১ ঘণ্টা। ইস্যুসমূহ: স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা, আমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, আমার বিদ্যালয় ও কেন্দ্রের পরিচ্ছন্নতা, ঘরবাড়ির পরিচ্ছন্নতা, ভালো অভ্যাস গঠন ও সুস্থ থাকা, ভালো অভ্যাসের ফলাফল, একটি তারার গল্প, শান্তিতে থাকার উপায়, কেন্দ্রে শান্তির অনুশীলন করা, বিশেষ অনুভূতি, সফল যোগাযোগ, সমঝোতা, সহমর্মীতা, শিশু অধিকারসহ বিভিন্ন আলোচনার পাশাপাশি বড়দের প্রতি সম্মান, ছোটদের স্নেহ করা, মিথ্যা না বলা, অন্যের কোন জিনিস না বলে স্পর্শ না করা, সবার সাথে মিলেমিশে থাকা, নিয়মিত নখ কাটা, হাত ধোয়া ইত্যাদি বিষয়ে অভ্যেস গড়ে তুলতে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে একাধিক অভিভাবক বলেন, এপির এ ধরনের ক্লাস আমাদের শিশুদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।

শিশুদের নিয়ে অধিবেশনে পর্যবেক্ষণে আসা এপির ব্যবস্থাপক, সিডিও।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

এপির ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন বলেন, এ বয়সে শিশুদের ভালো অভ্যাস তৈরি করতে পারলে এ শিশুরা ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। এরাই মানবিক, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সাফল্যের উদাহরণ তৈরি করবে।

সহায়ক নাদিয়া তাবাসসুম বলেন, এই অবুঝ শিশুদের মাতৃস্নেহ দিয়ে শিখানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই এদের ইতিবাচক আচরণ পরিবর্তন শুরু হয়েছে।

জানা যায়, এপির কর্মএলাকায় ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী ৩০০ জন এবং ৬ উর্ধ থেকে ১১ বছর বয়সী ৩০০ মোট ৬০০ শিশুকে বিদ্যালয় থেকে আসার পর সপ্তাহে একদিন তাদের সুবিধামত সময়ে অধিবেশন পরিচালনা করা হয়।

প্রতিটি অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রে ২০ জন করে শিশু অংশ নেয়। ৩০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জামালপুর পৌরসভা, শরিফপুর ও লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নে অধিবেশন পরিচালনা হয়ে আসছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে সহায়ক আছে।

১৬ সপ্তাহ পর অধিবেশন সমাপ্ত হলে এদের অর্জিত জ্ঞান, চর্চা, অভ্যাস বাধাগ্রস্ত হবে কী না এ প্রশ্নের জবাবে এপির সিডিও সাব্বির হোসেন বলেন, অধিবেশন পরিচালনা না করা হলেও এপির অন্যান্য কার্যক্রম ১০ বছর মেয়াদী চলবে। তাই এসব শিশুরা ফলোআপের মধ্যেই থাকবে।