শেরপুরে ঝড়, বৃষ্টি আর আম্ফানে ক্ষতির শিকার দুইশতাধিক কৃষক

ঝড়ের তান্ডবে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীতে কালবৈশাখীর ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টিতে দেড় শতাধিক কৃষকের সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের তান্ডবে প্রায় অর্ধশত মানুষের কাচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ২৭ মে সহ গত তিনদিনে বিভিন্ন সময়ে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া ও গোমড়া গ্রামে ওইসব ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জেলার আরেক উপজেলা শ্রীবরদীর তিনটি গ্রামের ৬০ জন কৃষক ক্ষতির শিকার হন। এমন অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে সরকারি প্রণোদনা হাতে পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আর ভেঙে পড়া কাচা ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সহায়তা দিতে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

কালবৈশাখীর তান্ডবে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে গোমড়া গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন বলেন, তার মতো আরও প্রায় অর্ধশত মানুষের বাড়ি ঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত ওইসব বাড়ির লোকজন খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন।

স্থানীয় কৃষক আসমত আলী বলেন, ঝড়ের কারণে কলা ও লিচু বাগান, আম, কাঁঠাল, বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ গাছ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া করলা, ঢেঁড়স, কাকরলের মাচা বিধ্বস্ত হয়েছে।

কৃষাণী আঞ্জুয়ারা জানান, তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে কাকরল চাষ করেছিলেন। কালবৈশাখীর ঝড়ে তার ক্ষেতের মাচাগুলো সব ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। এ কারণে তার পুরো সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ওই জমি থেকে সবজি আবাদের টাকায় তার পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। তিনি বলেন, এখন তাকে সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তাই সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কৃষক রুবেল মিয়া, সুরুজ আলী, আব্দুল আজিজ, রমজান আলী, আব্দুল রাজ্জাক, শুকুর আলীসহ আরও অনেকে জানান, তারা ঝিঙা, চিচিঙা, শশা, বরবটি, কাকরল, চাল কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করেছিলেন। এবারের ঝড়ে তাদের ওইসব সবজির ক্ষেত সবটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

কালবৈশাখীর তান্ডবে সন্ধ্যাকুড়া ও গোমড়া প্রামের প্রায় দেড় শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, এখন পর্যন্ত ওই দুই গ্রামের ৩৫ হেক্টর জমির সবজি আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করতে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া কাঁঠাল পাকার সময় ঘনিয়ে আসায় ফল খেতে বন্য হাতির দল মাঝে মধ্যেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে । যে কারণে চলতি আউস আবাদ এবং ফসলি জমির ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়গুলো জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ঝড়ের তান্ডবে সবজি আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এবং কৃষকদের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে প্রণোদনা দেবে সরকার। ওইসব প্রণোদনা হাতে পৌঁছলে কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার ও বীজ দিয়ে সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে ২৭ মে সকালে শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপজেলার ভেরুয়া ইউনিয়নের ভারারচর, চকবন্দি ও শিমুলচুড়া গ্রামের ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ওইসব জমিতে রোপণ করা ডাটা এবং পাট ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব গ্রামের ৬০ জন কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে তিনি জানান।

এছাড়া কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকলেও ২৭ মে সকালে এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত অন্য তিন উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।

তবে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা, নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস এবং নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির আকাশ বলেন, যদি কালবৈশাখীর ঝড়ে কোন কৃষকের ফসলি জমির ক্ষতি হয় তাহলে তারা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দেবেন।

অন্যদিকে ঝড়ের তান্ডবে ঝিনাইগাতীতে প্রায় অর্ধশত মানুষের কাচা ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় তা মেরামতের জন্য সহায়তা দিতে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ। তিনি বলেন, তালিকা হাতে পাওয়ার পর তিনি সরেজমিনে তা প্রত্যক্ষ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।