নয় বছর ধরে বন্ধ সরিষাবাড়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার!

এভাবেই বন্ধ রয়েছে নয় বছর ধরে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী ॥
নামেই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নাজুক অবস্থায় এর চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় পদ থাকলেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ রয়েছে নয় বছর ধরে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক কাজী এনামুল হক নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন না। সপ্তাহে দুয়েকদিন অফিস করলেও ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট ক্লিনিকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভিড় করলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। দালালদের খপ্পড়ে পড়ে রোগীরা প্রকাশ্যেই হয়রানির শিকার হলেও দেখার কেউ নেই। দীর্ঘ নয় বছর ধরে অপারেশন থিয়েটারটি চালু না হওয়ায় ছোটখাটো অপারেশনের জন্যও রোগীদের যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতাল বা কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকে। অব্যবহৃত ও অযত্ন অবস্থায় পড়ে থাকায় অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা খাগুরিয়া গ্রামের মালেকা বেওয়া, সাতপোয়া গ্রামের পলাশ মিয়া, সাইঞ্চারপাড়া গ্রামের সাজেদা বেগম, বলারদিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসার মান খুবই খারাপ। অধিকাংশ সময়ই ডাক্তার পাওয়া যায় না। রোগীর ভিড় বেশি থাকলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হয়। প্রায়ই ছোটখাটো কারণেই রোগীকে জামালপুর বা ময়মনসিংহ স্থানান্তর করা হয়।

দাপ্তরিক সূত্র জানায়, উপজেলার সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসায় ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে বর্তমানে শয্যা রয়েছে মাত্র ৩৬টি। ২৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন পাঁচজন। ১০টি বিশেষজ্ঞ পদের মধ্যে মাত্র তিনজন থাকলেও অনিয়মিত। এরমধ্যে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শেখ ফারহানা হুদা গত বছরের ৩০ নভেম্বর যোগদান করলেও হাসপাতালে অনুপস্থিত। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিরাজ আলী সপ্তাহে শুধুমাত্র রবি ও মঙ্গলবার থাকেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল আলম ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট চিকিৎসা নিয়ে। কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস্, চক্ষু, ইএনটি, সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন, ডেন্টাল, ইএমও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য দীর্ঘদিন ধরেই। সামান্য কারণে রোগীদের স্থানান্তর করা হয় জামালপুর জেনারেল কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

জানা গেছে, ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সহযোগিতায় মা ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা চালু হলেও বর্তমানে এটা বন্ধ। ২০০৮ সালে জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি) চালু হয়, যা এখন আতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালে ২২ লাখ টাকার মূল্যের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হলেও তা অকেজো পড়ে আছে। আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিনের পেপার না থাকায় এ সেবাগুলো বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ।

এ ব্যাপারে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার মমতাজ উদ্দিন বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, হাসপাতাল চালানো কঠিন হয়েছে। চিকিৎসক সঙ্কট ও যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। জনবল কম থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ প্রতিদিনই রোগীদের চাপ রয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী এনামুল হক বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, আমি টাঙ্গাইল থেকে এসে অফিস করি, তাই কখনো আসা সম্ভব হয় না। আর চিকিৎসক সঙ্কটের জন্য অপারেশন থিয়েটার বন্ধ ও কিছু জটিলতা রয়েছে।