কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার আয়োজন বন্ধ করলেন জামালপুরের পুলিশ সুপার

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মোস্তফা মনজু
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম

নিউ স্ট্যান্ডার্ট ফিন্যান্স এন্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতারক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। এতে করে জামালপুরের মানুষদের গ্রাহক করে তাদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার আগাম আয়োজন বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রকমের প্রতারকচক্র থেকে রক্ষা পেয়েছে জামালপুরবাসী। জামালপুর শহরের তমালতলা এলাকায় সওদাগর ম্যানসন ভবনের দোতলায় ওই প্রতিষ্ঠানটির জামালপুর কার্যালয় উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল ২১ মে।

এক লাখ টাকার জামানতের বিনিময়ে চাকরি পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী ছয়জন কর্মচারী ও একজন অফিস সহায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ২১ মে ভুক্তভোগী ওই কর্মচারীদের একজন বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ২২ মে সকালে তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, জামালপুর শহরের তমালতলায় সওদাগর ম্যানশনের দোতলায় নিউ স্ট্যান্ডার্ড ফিন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের শাখা অফিস খোলা হয়েছে। সেখানে লোকবল নিয়োগের নামে জামানত বাবদ এক লাখ টাকা নেয়া হয়। এছাড়া ঋণগ্রহিতাদের মধ্যে প্রত্যেক কর্মীকে ৩০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রত্যেক ঋণগ্রহিতার কাছ থেকে ঋণগ্রহিতার চাহিদা অনুযায়ী ঋণের শতকরা ১০ ভাগ অগ্রিম এবং শতকরা এক ভাগ সার্ভিস মূল্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমা করতে হবে মর্মে শর্তারোপ করা হয়।

এই শর্তে প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মচারীদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নিয়োগের কয়েকমাস কেটে গেলেও তাদেরকে কোন ভেতনভাতা দেওয়া হয়নি। ২১ মে প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন ও কর্মচারীদের যোগদানপত্র নেয়ার কথা ছিল। এদিন সকাল ১০টার আগে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা ওই প্রতিষ্ঠানে যান। কিন্তু কর্মীদের মধ্যে জমা দেওয়া অগ্রিম ও ঋণগ্রহীতাদের টাকা ফেরত নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ সেখানে গেলে কর্মচারীদের যোগদান না করিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জামালপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুল ইসলাম কৌশলে পালিয়ে যান। বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় ভুক্তভোগী কর্মচারীদের একজন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যান্য স্থান থেকেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যে সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তারাও কিন্তু এই প্রতারণার ফাঁদের পড়ে ভুক্তভোগী। তাদের দিয়েই এই জামালপুর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি জামালপুরবাসী একটি বড়রকমের প্রতারকচক্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সামনের দিনগুলোতে জামালপুরবাসীর কাছ থেকে প্রতারক গোষ্ঠীরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের কষ্টার্জিত টাকাগুলো যাতে না নিয়ে যেতে পারে, সেজন্যই কাজ করে যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ আনোয়ার, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরাব হোসাইন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর, জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পুলিশ পরিদর্শক-১ মো. রাশেদুল হাসান রাশেদ, সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকবৃন্দ এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।