ভালো বই পড়ার অভ্যাসে নেতিবাচক অভ্যাস কমে যায় : এডিসি মোক্তার হোসেন

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তার হোসেন। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম :
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তার হোসেন বলেছেন, আমার মনে হয় মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সরকার কিন্তু গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা এবং গ্রন্থাগার দিবস পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিচ্ছে। নবীন, প্রবীণ সবাই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন। ভালো বই পড়ার অভ্যাসে নেতিবাচক অভ্যাস কমে যায়।

‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে জামালপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের শুভ উদ্বোধন করা হয়। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

তিনি আরো বলেন, বই পড়ার অভ্যাস হলে মোবাইল ফোনে অযথা সময় নষ্ট করার যে বিষয়, সেটি আর থাকবে না। আমরা যখন লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ি, তখন মনে হয় যেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নজরুল থেকে শুরু করে সব লেখক যেন একেকটি তাকে বসে আছে। এই লাইব্রেরিতে ৪৫ হাজার বই রয়েছে। লাইব্রেরিতে যাতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ পাঠকরা এসে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে তার জন্য প্রচারণা চালাতে হবে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষার্থী, তরুণ-যুবকদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাসের একটি জাগরণ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা বলেন, আমরা শিশুদের মধ্যে বই পাঠের অভ্যাস ফিরিয়ে আনবো। তারা যেন মোবাইল ছেড়ে বইয়ের দিকে ঝুঁকতে পারে। তারা যেন নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। তাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাচ্চারা কোথায় যাচ্ছে, না যাচ্ছে, বাচ্চারা যেন খারাপ কোন নেশায় জড়িয়ে না যায়, এই সবকিছুতেই খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কবি সাযযাদ আনসারী বলেন, মানুষ কখনোই একা বাঁচে না। মানুষ বাঁচে এবং বাঁচায়। এজন্যই মানুষই শ্রেষ্ঠ। আর অন্য প্রাণিরা শুধু নিজেই খেয়ে বাঁচে। যারা অনেক বড় মানুষ, তারাও বাঁচে এবং সুন্দর করে বাঁচায়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যারা পড়ি, তাদের মূল লক্ষ্য থাকে বাঁচার। কতগুলো সনদ পাই। এই সনদগুলো না হলে চাকরি পাবো না। চাকরি না পেলে খেতে পারবো না। কিন্তু সেই কাজটিও কিন্তু উল্লেখযোগ্য হারে হচ্ছে না। সেই কাজটি আমরা যদি করতে পারি, সেটাই হবে এই লাইব্রেরির সার্থকতা। গ্রন্থাগার একজন মানুষকে সুন্দর করে বাঁচায়। এই গ্রন্থাগারই বলে দিবে যে ছবি কি জিনিস। ছবির প্রতি ভালোবাসা, চিত্রকলা, সঙ্গীত নৃত্য এই সবকিছু জেনে আনন্দে বাঁচার কারণে আমরা এই লাইব্রেরি ব্যবহার করি।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন মুন জাহান লিজা ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মুরাদ বলেন, একটি লাইব্রেরি হচ্ছে সমগ্র জাতির মানবজাতির ডায়েরি। একটি লাইব্রেরি কোন বিলাসিতা নয়। একটি লাইব্রেরি হচ্ছে মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার জন্য প্রয়োজনীয়তা। বিশ্বব্যাপী অবাধ তথ্য প্রবাহের সুপার এই যুগে একটি লাইব্রেরি আমাদের অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিতে পারে। ভালো বই ছাড়া একটি ঘর হচ্ছে আত্মাছাড়া শরীরের মতো। কোন ধরনের বই আমরা পড়বো। মনে রাখতে হবে সব বইই আলো ছড়ায় না। কিছু বই আলো নিভিয়ে অন্ধকারকে আহ্বান করে। যেসব বই গুঁড়ামি, প্রতিহিংসাকে নিয়ে আসে মানুষের মধ্যে, সেইসব বই আমরা পড়বো না। যা আমাদের বিজ্ঞান মনস্ক করবে, প্রগতিশীল করবে, মানবিক করবে, মনকে পরিশুব্ধ করবে, আমরা সেইসব বইই পড়বো।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার জামালপুরের সহকারী লাইব্রেরিয়ান রামেন্দ্র সরকার সুমিতের সভাপতিত্বে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এমাদুল হোসেন, কবি সাযযাদ আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, সিনিয়র তথ্য অফিসার মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন, ঝাউলা গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কবি তারিকুল ফেরদৌস, জামালপুর টেলিভিশন রিপোর্টারস ইউনিটের সভাপতি ফজলে এলাহী মাকাম, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি আমিনুর ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান আব্দুর রহমান মিয়া, বাংলারচিঠিডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মনজু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নূরে আলম খান সুজন।

আলোচনা সভা শেষে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন, বই পাঠ ও রচনা লেখা প্রতিযোগিতা এবং বিগত বছরের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে গণগ্রন্থাগার ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

আলোচনা সভার আগে গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোক্তার হোসেন। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের অনুষ্ঠানে গ্রণগ্রন্থাগারের পাঠক সদস্য, সাধারণ পাঠক, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বইপ্রেমী মানুষ অংশ নেন।