জামালপুরে বিংগস প্রকল্পের সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত

সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিশেষ প্রতিবেদক:
জামালপুর ও শেরপুর জেলার পুষ্টিগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শিশু এবং মায়েদের পুষ্টি স্থিতিশীলতাকে উন্নত করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ইনিসিয়েটিভ টু এনহ্যান্স নিউট্রিশন সিকিউরিটি এন্ড গভরন্যান্স (বিংগস) প্রকল্পের পাঁচ বছর সফল বাস্তবায়ন শেষে চলতি মাসে সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে ২১ আগস্ট জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে প্রকল্পের সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের বিংগস প্রকল্পের টিম লিডার ডা. মেরী রশিদ।

সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ, জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. তানভীর সুলতানা, জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুন্নাহার, পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা তাজ মিরা হাসেন, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, জামালপুর এরিয়া প্রোগ্রামের এরিয়া ম্যানেজার সাগর ডি কস্তা, ইসলামপুর এপি ম্যানেজার সজল গোমেজ, জামালপুর এপি ম্যানেজার মিনারা পারভীন, জেসমিন প্রকল্পের জামালপুর সদর উপজেলা সমন্বয়কারী সুজিত চিসিম, কিশোরী ক্লাবের সীমা আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামালপুর বিংগস প্রকল্পের ম্যানেজার জহিরুল হক।

সভা সূত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু পরিচর্যাকারী, পাঁচ বছরের নিচে শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এবং কিশোরীদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের উন্নয়ন করা। সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রো পুওর গভরন্যান্সের মাধ্যমে পুষ্টি সম্পর্কিত গুণগত মান ও সেবা বৃদ্ধি করা। উন্নত পারিবারিক খাদ্য উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমতা ও সংবেদনশীল পুষ্টি মূল্যক্রমের মাধ্যমে পারিবারিক খাদ্য গ্রহণের হার বৃদ্ধি। স্থানীয় জনসাধারণ, বেসরকারি পুষ্টি অংশীদার এবং স্থানীয় পুষ্টি কার্যক্রমের সমর্থনকারীদের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় করা।

উল্লেখ, এক লাখ ৫৩ হাজার ৮২৫টি দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবার নিয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ৯৩ হাজার ৮৭ জন চার বছরের নীচের বয়সি শিশু, ৫০ হাজার ৭৩২ জন গর্ভবতী দুগ্ধদানকারী নারী এবং ৪৪ হাজার ৭৩৫ জন কিশোরী রয়েছে। এই সংখ্যার মধ্যে আট হাজার ৮৪৬ জন প্রতিবন্ধী শিশু এবং ছয় হাজার ৮০৪ জন প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরী রয়েছে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় ওয়ার্ল্ড ভিশন ও উন্নয়ন সংঘ জামালপুর ও শেরপুর জেলায় সাড়ে পাঁচ বছরব্যাপী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

প্রকল্পের অর্জনের বিষয়ে জানা যায়, খর্বাকায় শিশুর হার কমেছে দেড় ভাগ, কৃষকায় শিশুর হার কমেছে দুই ভাগ, ৫ বছরের কম বয়েসী কম ওজনের শিশুর হার কমেছ ৩ ভাগ, প্রজনন বয়সী নারীদের ন্যূনতম বিভিন্ন খাদ্য বৈচিত্র গ্রহণের হার বেড়েছে ১২ ভাগ, গর্ভবতী মায়েদের আয়রন বড়ি সেবনের হার বেড়েছে ৫ ভাগ, জিংক সমৃদ্ধ ভাত খাওয়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর হার বেড়েছে ১৫ ভাগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে ১০ ভাগ, পুষ্টি সংক্রান্ত পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে ১০ ভাগ।

আলোচকরা বিংগস প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা এলাকায় পুষ্টিহীনতা দূরিকরণ এবং এ সংক্রান্ত সহকার্যক্রম শতভাগ অর্জনের জন্য ওয়ার্ল্ড ভিশন এবং দাতা সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের উদাত্ত আহ্বান জানান।

সভার শুরু ও শেষে দেশাত্ববোধক গানের ওপর মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করে বিংগস এর কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা।