ক্রিকেটারদের জানা উচিৎ কখন থামতে হবে : সুজন

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে অবসর সম্পর্কে সিনিয়র খেলোয়াড়দের পরিকল্পনা থাকা উচিত মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।

তার মতে, দুর্ভাগ্যবশত এখনও এমন সংস্কৃতি এদেশে তৈরি হয়নি। কারণ মাঠ থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অবসর নেওয়ার সংখ্যা হাতেগোনা অল্প কিছু।

মাঠ থেকে অবসর নেওয়া কয়েকজনের মধ্যে একজন সুজন নিজের ক্যারিয়ারের উদাহরণ টেনে এনে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, সময় শেষ হলে সেটি বুঝতে হবে সিনিয়র ক্রিকেটারদের।

সম্প্রতি এশিয়া কাপের দল থেকে সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়ার পর এমন মন্তব্য করেন মাহমুদ।

টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে যথেষ্ট বিকল্প থাকায় জাতীয় দলে ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহর পুনরায় ফেরার সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে হচ্ছে।

দু’বার মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো মাহমুদুল্লাহকে। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তিনি জানিয়েছিলেন, জাতীয় দলে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিবেন।

বয়সের কারণে পারফরমেন্সে প্রভাব পড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই দলে মাহমুদুল্লাহর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলো। এমন নয় যে, এই বয়সে খেলছেন না খেলোয়াড়রা। কিন্তু এই বয়সে যারা খেলছেন, তারা নিজেদের ফিটনেস এবং পারফরমেন্স অব্যাহত রেখেই খেলছেন।

আজ সুজন বলেন, ‘আমার (অবসর নেওয়ার সাহস) তো ছিল। আমি তো অবসর নিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার সময় শেষ। আমি না ছেড়ে দিলে নতুন খেলোয়াড় আসবে কিভাবে? এটা ক্রিকেটারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বিদায় জানানোর কোনটা সঠিক সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন (ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া)। আমিও সেই মুহূর্ত অতিক্রম করছিলাম। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। বর্তমান ক্রিকেটাররা যত টাকা পাচ্ছেন, আমরা ততটা তখন পাইনি। আমরা খুব অল্প টাকায় খেলেছি। কিন্তু তখন আমাদের ভালোবাসা ছিল। আমরা সেটা ছেড়ে দিতে পেরেছি। জানি না এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা কেন ছাড়তে চায় না? কেন তাদের ছেড়ে দেওয়ার সাহস নেই।’

সুজনের মতে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে এবং এক সময় থামতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এক সময় আপনাকে ছাড়তে হবে। আকরাম (খান) ভাইছেড়েছেন, নান্নু ভাই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার ছিলেন, তিনিও ছেড়েছেন। হাবিবুল বাশার, এক সময় যাকে মিস্টার ফিফটি বলে ডাকা হতো, বাংলাদেশের অধিনায়কত্বও করেছিলেন, অনেক রান করেছেন, তাকেও ছাড়তে হয়েছে।’

সেরা ফর্মে থাকা সত্বেও অ্যাশেজ চলাকালীন অবসরের ঘোষণা দেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। সেই উদাহরণ টেনে মাহমুদ বলেন, ‘চাইলে তিনি আরও খেলতে পারতেন, কিন্তু এই সময়ে শেষ করেছেন। ব্রড কি এখনও খেলতে পারতেন না? তাহলে বিদায় নিলো কেন? এটাই আমার কথা। কখন থামতে হবে তা জানতে হবে। ক্রিকেটারদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। আমি মনে করি এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা কাউকে জোর করতে পারি না। আমরা কাউকে বলতে পারি না, আপনার বয়স হয়েছে। এই কথা বলার অধিকার আমাদের কারো নেই।’

কেউ যদি সঠিক সময়ে অবসর না নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে বাদ পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন সুজন।

তিনি বলেন, ‘তারা যদি মনে করে, আমার আরও খেলা উচিত, আরও দুই-তিন বছর খেলতে পারবো, ঠিক আছে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তারপর বাদ দেওয়া হলে আপনি বলতে পারবেন না কেন বাদ দেওয়া হলো।’

গেম ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান সুজনের মতে দলের সব সিনিয়র ক্রিকেটার খেলা ছেড়ে দিলেও সঠিক পথেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছে মুশফিক। তামিমও ছেড়েছে এবং সবাইকে এভাবেই ছেড়ে দিতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে, একের পর এক অবসর হলে এদেশের ক্রিকেট থেমে যাবে। আমরা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে পারি না। নতুন ক্রিকেটার আনতে হবে। আমাদের একটি গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ আছে, যার দায়িত্ব ক্রিকেটারদের একটি পাইপলাইন তৈরি করা। ভুলে গেলে চলবে না, তামিম-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ সেই পাইপলাইন থেকেই এসেছে।’