জামালপুরে একদিনে পাগলা কুকুরের কামড়ে ২৭ জন আহত

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুর পৌরসভার পশ্চিম ফুলবাড়িয়া ও জিগাতলা এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাগলা কুকুরের আক্রমণে ও কামড়ে ২৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৯ জন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ রয়েছেন। ২৮ মে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। আহতরা সবাই ২৫০ শয্যা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই দিনে এতোগুলো মানুষকে কুকুরে কামড়ানোর ঘটনাটি বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় কুকুরের কামড়ে আহত রোগীদের বাইরে থেকে একটি ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কুকুরের কামড়ে আহতরা হলেন, কামাল (৩২), ফারজানা (২১), প্রীতিমম (৭), মোরাদ (১৫), শেফালী (৯), আয়নাল (৪৫), তানহা (৭), জহুরুল (৪৬), জায়েদা বেগম (৬০), শওকত (৫০), রাজ (৩৩), নুরু (২), শেফালী খাতুন (৪৫), কাউছার (৭), মল্লিক (২৫), আউয়াল (৪৩), আব্দুল কাদের দুলাল (৭৫), ময়েন উদ্দিন (৩০), নূর ইসলাম (৪০), মেঘ (৫), কেয়ামনি (১১), রাসেল (৪০), হামেদা খাতুন (৭০), রনি (২২), সাদমান (১২), সাজু (৩৫), তোফাজ্জল (৫১)। আহতদের মধ্যে জামালপুর শহরের পশ্চিম ফুলবাড়িয়া ও জিগাতলা এলাকায় একটি পাগলা কুকুরের কামড়েই শিশু, তরুণ, যুবক ও বয়স্ক আট ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। বাকিরা জামালপুর পৌরসভার কাছারীপাড়া, গেইটপাড়, লাঙ্গলজোড়া, শাহপুর, বন্দেরবাড়ি, ছনকান্দা ও পাথালিয়া, সদর উপজেলার নরুন্দি, শরিফপুর, নান্দিনা ও তুলসীপুর এবং মেলান্দহ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আহতদের কারো পায়ে, পায়ের উরুতে, হাতে, পেটে, মুখে, আঙুলে ও গলায়সহ বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়েছে কুকুরে।

কুকুরের আক্রমণ ও কামড়ে আহতরা সবাই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের দুটি ভ্যাকসিনের মধ্যে একটি ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই দীর্ঘদিন ধরে। র‌্যাভিক্স ভিসি নামের সেই ভ্যাকসিনটি বাইরে থেকে কিনতে লাগে প্রতি ভায়াল ৪৫০ টাকা করে। অন্য ভ্যাকসিনটি হলো ইম্যুনোগ্লোবিওলিন। এটি একটি দামি ভ্যাকসিন। এর প্রতিটি ভায়ালের দাম এক হাজার ৫০ টাকা। ফলে ২৮ মে কুকুরের কামড়ে আহতদের প্রত্যেককেই একটি করে ভ্যাকসিন বাইরে থেকে কিনে এনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

কুকুরের কামড়ে গুরুতর আহত জামালপুর শহরের ফুলবাড়িয়া জিগাতলা এলাকার আব্দুল কাদের দুলাল (৭৫) জানান, তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তায় থাকা একটি কুকুর তার ওপর আক্রমণ করে। কুকুরটি তার এক পায়ে এবং হাতের আঙুলে কামড় দিলে রক্তাক্ত জখম হয়। স্থানীয়রা কুকুরটিকে তাড়া করলে আরো কয়েকজনকে কামড়ায়। কুকুরটি তাড়া খেয়ে কাছেই পশ্চিম ফুলবাড়িয়ার দিকে চলে যায়। সেখানেও আরো কয়েকজনকে কামড়ায়। পরে স্থানীয়রা দলবেঁধে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটিকে মেরে ফেলে।

ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের দুলাল অভিযোগ করে বলেন, কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার পর জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাই। হাসপাতাল থেকে একটা ইনজেকশন ফ্রি পাইছি। আরেকটা ইনজেকশন ৪৫০ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। শুধু আমি না, সবাইকেই একটা করে ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

জামালপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল ইসলাম কুকুরের কামড়ে আহতদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ২৮ মে সকাল ১০টার পর থেকে বেলা সাড়ে ১২ পর্যন্ত অন্তত ২৭ রোগী আমাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। কয়েকজনকে ভর্তিও করা হয়। পরে তারা বাড়িতে চলে গেছেন। এই হাসপাতালে তুলনামূলক কমদামের র‌্যাভিক্স ভিসি নামের ভ্যাকসিনটির সরবরাহ নেই অনেকদিন ধরে। আর দামি ইম্যুনোগ্লোবিওলিন নামের ভ্যাকসিনটি এখানে মজুদ আছে। ফলে একটি ভ্যাকসিন রোগীরাই বাইরে থেকে কিনে এনেছেন। সবাইকে টানা কয়েকদিনের চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেউ গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

sarkar furniture Ad
Green House Ad