ঈদ পালনে ছদ্মবেশে বাড়ি এসে র‌্যাবের জালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হোসেন আলী। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শিশু অপহরণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ঈদ উদযাপনে ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজ এলাকায় এসে র‌্যাবের জালে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ওই আসামির নাম হোসেন আলী (৪২)। ২৩ এপ্রিল সকালে আসামির নিজ গ্রাম শেরপুরের নকলার চকপাড়া এলাকার এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৪। পরে বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা।

গ্রেপ্তার হোসেন আলী নকলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের আজম আলীর ছেলে। অপহৃত শিশু সম্পর্কে তার ভাতিজি।

র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভিকটিম আকলিমা খাতুন (৪) হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। হোসেন আলী ভিকটিমের বাবার মামাতো বোন তাসলিমা খাতুনের (২৫) স্বামী। হোসেন আলী দুই বিয়ে করে, তাসলিমা দ্বিতীয় স্ত্রী। সেই সুবাদে হোসেন ও তাসলিমা প্রায়ই আকলিমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। গত ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর হোসেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমাদের বাড়িতে আসে এবং ভিকটিমকে ভাল পোশাক, চকলেট, লোভনীয় খাবারের প্রলোভন দিয়ে বাজারে নিয়ে যায় এবং অত্যন্ত সু-পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে অপহরণ করে ঢাকায় নেয়। এক পর্যায়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোন খোঁজ না পেয়ে হোসেন আলীর কাছে ফোন দেয় আকলিমার বাবা। এ সময় হোসেন জানায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে আকলিমা ঢাকায় চলে আসছে। এবং আকলিমাকে ফিরে পেতে এক লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে এবং ভিকটিমকে নিতে কাঁচপুর ব্রিজের নিচে আসতে বলে অন্যথায় আকলিমাকে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার হুমকি দেয় হোসেন। পরবর্তীতে আকলিমার বাবা আব্দুল জলিল (৪২) বাদী হয়ে নকলা থানায় অভিযোগ দাখিল করে।

র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ও ৮ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ আখতারুজ্জামান হোসেন আলীর বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আসামিকে চৌদ্দ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৮ ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

র‌্যাব-১৪ কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান জানান, মামলার ঘটনার পর থেকে আসামি হোসেন আলী ১২ বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি গাজীপুরের সালনা এলাকায় গার্মেন্টসে এবং সিএনজি চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

র‌্যাব-১৪ কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান আরো জানান, র‌্যাব-১৪ সিপিসি-১ জামালপুর ক্যাম্পের আভিযানিক দল জানতে পারে যে আসামি ঈদ উদযাপনের জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামির অবস্থান সনাক্ত করে আজ রবিবার (২৩ এপ্রিল) নকলার চকপাড়া এলাকার হোসেন আলীকে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিকে নকলা থানায় হস্তান্তর করা হয়।