সাবেক ছাত্রলীগনেতা নূর হোসেন আবু হানি নির্যাতিত, মেয়রের কুশপুত্তলিকা দাহ

নূর হোসেন আবু হানিকে নির্যাতনের প্রতিবাদে মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ফেসবুক লাইভে এসে জামালপুর পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার জেরে জামালপুর শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর হোসেন আবু হানিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত এবং মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দিয়েছে মেয়রের সমর্থকরা। মেয়রের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নূর হোসেন আবু হানিকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। ২৯ মার্চ রাতে জামালপুর শহরের পাথলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে ৩০ মার্চ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, মেয়রের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে নূর হোসেন আবু হানির পরিবারের স্বজন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

জানা গেছে, জামালপুর শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া কামারবাড়ি এলাকার মো. আব্দুর রশিদের ছেলে নূর হোসেন আবু হানি (৩৩) ২৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনকে ‘ভূমিদস্যু’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে জমি দখল সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন। মেয়রের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি পৌরসভার মধ্যবর্তী নির্বাচনও দাবি করেছেন। তার ওই লাইভ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়লে মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এবং তার স্বজন ও সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

২৯ মার্চ সন্ধ্যার পর মেয়রের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা পাথালিয়া এলাকায় নূর হোসেন আবু হানিকে একা পেয়ে তাকে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। হামলাকারীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করেছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরপরই জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন নিজেই বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে বানোয়াট অপপ্রচার করে মানহানির অভিযোগ এনে ২৯ মার্চ রাতে নূর হোসেনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ২৯ মার্চ রাতেই পুলিশ ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। ৩০ মার্চ বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

অপরদিকে সাবেক ছাত্রলীগনেতা নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে ৩০ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পাথালিয়া এলাকা থেকে নূর হোসেনের স্বজন ও সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে সেখানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে নূর হোসেনের মুক্তির দাবি জানান।

নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, শহরের পাথালিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নূর হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে সেই প্রকল্পের জন্য তাদেরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। নূর হোসেন ২৯ মার্চ বিকেলে তার ফেসবুক পেজে লাইভে এসে আমার পৈত্রিক জমির পাশে গিয়ে মাটি ভরাটের কাজের লাইভ দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগসহ বক্তব্য দিয়ে আমার সম্মানহানি করেছে। এতে আমার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে নূর হোসেনকে মারধর করেছে শুনেছি। আমি তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছি।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নূর হোসেনকে একমাত্র আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ মার্চ বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নূর হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি।