সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের স্মরণ সভা

সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন এমপি। ছবি : মাহমুদুল হাসান মুক্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামালপুর প্রেসক্লাব ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরণ সভার আয়োজন করে।

জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় প্রয়াত সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন। স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক- জেসিসিআইয়ের সভাপতি মো. রেজাউল করিম রেজনু ও জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

এছাড়াও স্মরণ সভায় জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান, দৈনিক সচেতন কণ্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের জামালপুর প্রতিনিধি মোস্তফা মনজু ও প্রয়াত সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের ছেলে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জামালপুর প্রতিনিধি সাইমুম সাব্বির শোভন বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা প্রয়াত সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ।

স্মরণ সভায় জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

স্মরণ সভার শুরুতেই ভাষা শহীদ ও প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে অতিথিবৃন্দসহ সকলেই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন। পরে সাংবাদিক দুলাল হোসাইনসহ নিহত সকল সাংবাদিকদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

১৯৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামে পিতা ইদ্রিস আলী এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন দুলাল হোসাইন। তিনি পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আর্থিক অভাবের কারণে লেখাপড়া ছেড়ে খুব কম বয়সে সংসারের হাল ধরেন। তবে সম্মান ও সফলতার উচ্চ শিহরে পৌঁছানোর আশায় হাজারও অভাবের পরেও ১৯৮২ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন দুলাল হোসাইন।

১৯৮২ সালে পাক্ষিক জামালপুর প্রবাহ। এরপর ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের স্মৃতি। জেলা প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ভোরের ডাকে কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে দৈনিক সকালের খবর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ ২০০০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জামালপুরের ব্যাপক জনপ্রিয় পত্রিকা সাপ্তাহিক ঝিনাই এর নির্বাহী সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

এছাড়াও ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি বৈশাখী টেলিভিশনে জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে তার কাজ শুরু হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে কাজ করেন দেশ টিভিতে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৮ মে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে।

তার লেখনী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে মন কেড়েছেন লাখো জামালপুরবাসীর। শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সাংবাদিক নেতা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন গুণী এই সাংবাদিক। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে সর্বদা সোচ্চার ও কঠোর ছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন।

১৯৯১ সালে জামালপুর প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময় জামালপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। এরপর ২০০২ সালে সর্বপ্রথম জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। এরপর জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন দুলাল হোসাইন। এরপর ২০১৮ সালে আবারও জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

দীর্ঘ দশ মাস মরণব্যাধী ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৭ বছর। তিনি বাবা, স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলেসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।