জামালপুরে হিজড়াদের পরিবর্তনের ধারা শুরু

হিজড়াদের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ‘ওরাও মানুষ ওদের মাঝেও আছে অমিত সম্ভাবনা, ওরাও পারে বদলে দিতে শতবছরের বঞ্চনা’কবিতার মতো প্রতিফলন দেখা দিয়েছে জামালপুরে হিজড়াদের আচরণ ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ধারা। সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিজড়াদের জীবনমানের উন্নয়নে উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে শুরু হয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প।

২০২১ সালের শেষদিকে বাংলাদেশের অন্যতম স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম এর আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংঘের মাধ্যমে জামালপুর জেলায় প্রাথমিকভাবে ২৫০ জন হিজড়া সদস্য নিয়ে প্রকল্পটির বহুমাত্রিক কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রেডভিত্তিক ও নেতৃত্ব বিকাশ, মানবিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাঝে সুদবিহিন ঋণ প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ে উন্নয়ন সংঘ ৭৩ জন সদস্যকে ২৫ হাজার টাকা করে ঋণ প্রদান করে। উন্নয়ন সংঘের প্রকল্প কর্মকর্তা আরজু মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান, হিজড়া সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী প্রথমে প্রশিক্ষণ পরে ট্রেডভিত্তিক ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ আদায়ের হার শতভাগ এবং স্ব স্ব কাজ সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

হিজড়াদের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

গত এক বছরের ব্যবধানে আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। গত ৩ জানুয়ারি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে বাস্তব অবস্থা পরিবীক্ষণে পরিবর্তনের নমুনা দেখা যায়।

শাহবাজপুর বাজারে চা, পান বিক্রেতা সাগর হোসেন বলেন, উন্নয়ন সংঘ থেকে ঋণ নিয়ে এখন কর্ম করে খাই। দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করি। ৫/৭শ টাকা লাভ হয়। সংসারে প্রতিদিন খরচ হয় আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। ঋণ নেয়ার পর ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছি। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

হিজড়াদের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

একই বাজারে মিলন মিয়া সেলুন দিয়ে নরসুন্দরের কাজ করছে। তিনি জানান, আগে কোন প্রতিষ্ঠান ভয়ে তাদের ঋণ দেয় নাই। কেউ আমাদের বিশ্বাস করে নাই। উন্নয়ন সংঘ থেকে ঋণ নিয়ে সেলুন কাজের উপকরণ ক্রয় করেছি। আগের তুলনায় এখন কাস্টমার বেশি আসে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকা রোজগার হয়। সংসারে খরচ বাদে ঋণের কিস্তি, সঞ্চয় জমা করে ভালোই দিন যাচ্ছে।

মুদির দোকানদার মিলন মিয়া এখন আর কারো কাছে হাত পাতে না। উন্নয়ন সংঘ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় কাজে লাগিয়েছে। তিনি অধিক উপার্জনের জন্যে মাছ ধরে বিক্রি করে। এখন সবাই তাকে সম্মান করে। উন্নয়ন সংঘ থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ পেয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে বলে জানান।

কার্যক্রম পরিদর্শনে আসা উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের পরিবার ও সমাজে পুনর্বাসন, তাদের আচরণগত ইতিবাচক পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তাদের সাথে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি উদ্যোক্তা বানাতে কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত সঠিক ধারায় কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করছি। অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।