টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বকাপে আবারও ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ


বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑
২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিলো বিশ্ব ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। এক বছরের ব্যবধানে আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ।

অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের চতুর্থ ও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২৩ অক্টোবর মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই মহারণের উন্মাদনা আকাশ-ছোঁয়া। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে ভারত-পাকিস্তানের বহু কাঙ্খিত ক্রিকেট লড়াই।

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলো ভারত ও পাকিস্তান। ঐ ম্যাচটি পাকিস্তানের জন্য শেষ পর্যন্ত চিরস্মরনীয় হয়ে থাকে। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথমবারের মত ভারতকে হারানোর নজির গড়ে পাকিস্তান।

ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটে বড় জয় পায় পাকিস্তান। পাক পেসারদের তোপে ম্যাচের শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত। পাকিস্তান পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির তোপে ৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। পরবর্তীতে তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলির লড়াকু হাফ-সেঞ্চুরিতে শুরুর ধাক্কা সামলে পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৫১ রান করে ভারত।

ভারতের ছুঁড়ে দেয়া এই ১৫২ রানের টার্গেট অনায়সে স্পর্শ করে ফেলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ১৩ বল বাকী রেখে বিনা উইকেটে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন তারা। রিজওয়ান ৭৯ ও বাবর ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন।

বিশ্বকাপের ঐ ম্যাচের পর সর্বশেষ এশিয়া কাপে দু’বার দেখা হয় ভারত ও পাকিস্তানের। দু’বারই ৫ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।

টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের প্রস্ততি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছে ভারত ও পাকিস্তান। এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে না পারা ভারত এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দু’টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে ভারত। তিন ম্যাচের দুই সিরিজই ২-১ ব্যবধানে জিতে টিম ইন্ডিয়া।

বিশ্বকাপের অফিসিয়াল দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ ছিলো ভারতের। ব্রিজবেনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬ রানে হারায় রোহিত-কোহলিরা। ব্রিজবেনেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচটি বৃষ্টি কারনে পরিত্যক্ত হয় ভারতের।

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি ভারত। সুপার টুয়েলভ থেকে আসর শেষ করতে হয় তাদের। ঐ বিশ্বকাপের পরই বিরাট কোহলির জায়গায় ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব পান রোহিত শর্মা।

গত বিশ^কাপের পর ৩৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে ভারত। জয় আছে ২৬টিতে। হার আছে ৮টিতে। ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে গত তিন দিন ধরে মেলবোর্নে ঘাম ঝড়িয়েছে ভারত। নেটে বেশি সময় ব্যাট করেছেন টপ-অর্ডাররা। তাদের দেখাভালে সিরিয়াস ছিলেন প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। বোলিংয়েও ঘাম ঝড়িয়েছেন পেসার ও স্পিনাররা। দলের সেরা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ’র না থাকার অভাব বুঝতে দিতে চায় না পেস বিভাগ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে অভিহিত করেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত বলেন, ‘আমি জানি সবাই পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই উত্তেজনা। বিশ্বকাপের সব থেকে বড় ম্যাচ এটি। দু’দেশের কোটি কোটি সমর্থকের নজর থাকে এই ম্যাচের দিকে। কিন্তু আমরা সে সব নিয়ে বেশি চিন্তা করছি না। নিজেদের মধ্যে বেশি কথা বলছি না। শুধু নিজেদের প্রস্তুতির দিকে নজর দিচ্ছি।’

প্রথমবার অধিনায়ক হিসাবে কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতায় খেলবেন রোহিত। এই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি, ‘এটা আমার কাছে বিশেষ মুহূর্ত। এই বিশ্বকাপে ভাল খেলতে চাই। বিশ্বকাপের আগে দেশে দু’টো সিরিজ জিতেছি। প্রস্তুতি খুব ভাল। কিন্তু বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই, এর সাথে কোনও সিরিজের তুলনা হয় না। তাই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস রাখতে চাই না। শুধু নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে চাই। আমি জানি দলের সবাই ভাল খেললে আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারব।’

ভারতকে হারিয়ে গত বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়।

গত বিশ্বকাপের পর ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে পাকিস্তান। জয় পেয়েছে ১৬টিতে। হারতে হয়েছে আছে ৯টিতে। ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলংকার কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তান। এশিয়া কাপের পর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-৩ ব্যবধানে হারে তারা।

পরপর দুই সিরিজে সেরা সাফল্য না পাবার দুঃখ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঘোচায় পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।

বিশ^কাপের দু’টি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের মধ্যে ইংল্যান্ডের কাছে ৬ উইকেটে হারে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অন্য ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। ঐ ম্যাচে পুরো ২০ ওভার বোলিং করতে পারেন পাকিস্তানের বোলাররা। সকলের নজর ছিলো দলের সেরা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির দিকে।

গত জুলাইয়ে শ্রীলংকা সফরে টেস্ট সিরিজে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে মাঠে বাইরে ছিটকে পড়েছিলেন আফ্রিদি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ দিয়ে আবারও ২২ গজে ফিরেন তিনি। ২ ওভারে ৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন আফ্রিদি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচে বল হাতে পুরনো রুপে দেখা গেছে আফ্রিদিকে। ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য বাড়তি অনুশীলন করেছে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। ঘাম ঝড়িয়েছেন দলের ক্রিকেটাররা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই নিজেদের উজার করে দেয়ার ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। তিনি বলেন, ‘গত বছরও বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে আমরা সেরা প্রস্তুতি নিয়েছি। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই ক্রিকেটাররা বাড়তি অনুপ্রেরণা পায়। সচরাচর ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয় না আমাদের। তাই এ ম্যাচ সামনে এলেই জ¦লে উঠে চায় সতীর্থরা। বিশ্বকাপের পর এশিয়া কাপেও, আমরা টানা দুই ম্যাচ জিতেছি। এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে চাই।’

মাঠের লড়াই শুরুর আগে বাইরে বেশ সরগরম ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। সদ্যই বার্ষিক সভা শেষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব ও এসিসি সভাপতি জয় শাহ জানান, ‘আমরা ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবো না। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ দেশে হবে।’

জয় শাহর এমন মন্তব্যের পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) থেকে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ভারতে বসতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবে না পাকিস্তান।

দু’দশের পাল্টাপাল্টি কাঁদা ছোড়াছুড়ি সরগরম ক্রিকেট পাড়া। এরমধ্যে বিশ^কাপের মঞ্চে ২২ গজের লড়াইয়ে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি করেছে।

তবে বৃস্টি কেড়ে নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান মহারণের সব আর্কষন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হবে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দফতর বলছে, সারা দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। দুপুরের পর থেকে বইবে ঝড়ো বাতাস । বিকেল থেকে ৮০ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মেলবোর্নের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশ ভাল। বৃষ্টি থেমে গেলে দ্রুত ম্যাচ শুরু করার নজির আছে ঐ ভেন্যুর।

টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ১১বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ভারতের জয় ৭বার, পাকিস্তানের জয় ৩বার। একটি ম্যাচ টাই। ঐ টাই ম্যাচে ‘বল আউট’ জিতেছিলো ভারত।

২০০৭ সালে হওয়া প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিলো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হওয়া ঐ আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপাও জিতেছিলো মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত।

২০০৯ সালে দ্বিতীয় আসরে শিরোপা জিতে পাকিস্তান। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে শ্রীলংকাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিলো তৎকালীন অধিনায়ক ইউনুস খানের পাকিস্তান।

পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), আসিফ আলি, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ ও ফখর জামান।

ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (সহ-অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, সুর্যকুমার যাদব, দীপক হুদা, ঋশভ পান্থ (উইকেটরক্ষক), দিনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক), হার্দিক পান্ডিয়া, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ সামি, যুজবেন্দ্রা চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবেনশ্বর কুমার, হার্শাল প্যাটেল ও আর্শদিপ সিং।