জামালপুরের বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত দুই যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু

যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল (বীর প্রতীক) ও যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান (বীর প্রতীক)।

মাহমুদুল হাসান মুক্তা, নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : একই দিনে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত জামালপুরের দু’জন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। রবিবার (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল (বীর প্রতীক)। একই দিন বেলা পৌনে ২টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান (বীর প্রতীক) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

জামালপুরের কৃতী সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল (বীর প্রতীক) দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সার ও বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত শনিবার (২০ মে) রাতে আকস্মিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের স্বজনরা তাকে রাতেই জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। রবিবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে, আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রবিবার বাদ আসর জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরানের নেতৃত্বে সদর থানা পুলিশ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো অবস্থায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুক্তার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত আলী ফকির, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান ও মরহুমের ছোট ভাই দুরমুঠ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বীর এই মুক্তিযোদ্ধার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং তার স্মরণে বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত: বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল (বীর প্রতীক) ১৯৫০ সালের ৩১ জানুয়ারি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ বদরুজ্জামান এবং মায়ের নাম সৈয়দা খোদেজা জামান। ১৯৭১ সালে মা-বাবার অনুমতি তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব সেক্টরের একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কামালপুরসহ আরও কয়েক স্থানের যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তিনি ও তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধারা সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন। সোমবার (২৩ মে) সকাল ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়ি জেলার মেলান্দহ উপজেলার দুরুমুঠের সাহেববাড়িতে দ্বিতীয়বার জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

অপর বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান (৭৩) রবিবার (২২ মে) বেলা পৌনে ২টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যে ভুগছিলেন। স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বীর প্রতীকের ছেলে গোলাম মোস্তফা মিস্টার জানান, তার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধের সময় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরে বীরত্বের কারণে সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন। যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সোমবার সকাল ৯টায় নিজ বাড়িতে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন ও জানাজা নামাজ শেষে ধানুয়া ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।