যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এইচবিবি এর উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এইচবিবি এর উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

বিশেষ প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাক্রামেন্টোরে হিউমেনেটি বিইয়ন্ড বেরিয়ার (এইচবিবি) এর উদ্যোগে ২৬ মার্চ উদযাপিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। পাশাপাশি বিপদাপন্ন মানুষের কল্যাণে এবং পরিবেশ উন্নয়নে সংস্থাটির তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

শনিবার পরিবেশ ও মানব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এইচবিবি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিভিন্ন দেশের মানবপ্রেমী মানুষদের মহামিলনের ক্ষেত্র।

এদিন বিকাল ৫টায় রিচার্ড ব্রুনেইল পারফর্মেন্স হলে ‘স্বাধীনতা মেলা’ উদ্বোধন করা হয়। মেলা উদ্বোধন করেন এইচবিবি’র সাধারণ সম্পাদক আকীম কবীর। মেলায় বিভিন্ন স্টলে স্থান পায় নানা ধরনের দেশীয় খাবার, বই, দেশীয় শাড়ি, গয়না এবং বাংলাদেশের প্রতীক চিহ্নিত সুভেনিরসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় আইটেম।

এইচবিবি’র কোষাধ্যক্ষ এম এম আর মুকুলের সার্বিক সহায়তায় স্বাধীনতা মেলাটি উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাংলাদেশিদের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতার চেতনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এইচবিবি ইয়ুথ ডিরেক্টর সায়মা শহীদ সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে এইচবিবি’র গত এক বছরের কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয় । উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উপস্থিত সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন।

দেশের দায় পরিশোধ এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার তাড়না থেকে সবাইকে ইতিবাচক সাড়া দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ সময়ে এমন একটি আয়োজনের জন্য উপস্থিত সবাই ভীষণভাবে খুশি এবং অনুপ্রাণিত হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এইচবিবি’র গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের উপর সবার আস্থা ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা বেড়ে গেছে বলে সূত্র জানায়।

এইচবিবি প্রেসিডেন্ট ড. শেখ সেলিম শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। এইচবিবি’র পরিচালক জাওদাত হাসান রহমান এইচবিবি’র কার্যক্রমের তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপনে সহায়তা করেন।

পরিবেশ ও মানব কল্যাণে এইচবিবি ২০১৫ সাল থেকে আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার মহাদেশে কাজ করে আসছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমন শুরু থেকে এই পর্যন্ত এইচবিবি গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম বিশ্বে প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়েছে বলে দাবি করেন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি বছর এইচবিবি ব্যতিক্রম ও ভিন্নধারার সেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায় করে থাকে। বিশেষ করে বন্যায়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল তৈরি করে দেওয়া, উত্তরবঙ্গে শিশু সর্গ নির্মাণে সহযোগীতা করা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য যাতায়াত বাহন তৈরি, করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ, পানি সরবরাহ, ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত সেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, সমাজের তৃতীয় লিঙ্গ মানুষের সহায়তা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নত করনে সহায়তা, দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানসহ বর্তমানে আরও বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে।

এইচবিবি’র উল্লেখযোগ্য একটি কার্যক্রম হলো টেলিমেডিসিন। এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন এইচবিবি’র পরিচালক ড. হালিমা করিম। এইচবিবি’র আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো ছিন্নমূল পথশিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ‘ছায়াতল বাংলাদেশ’। প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন প্রকল্প সমন্বয়কারী ডা. সৈয়দা কবির তুলি। তিনি মঞ্চে ডেকে এনে পরিচয় করিয়ে দেন দেশ থেকে আগত অতিথি ছায়াতল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মো. সোহেল রানাকে।

অনুষ্ঠান চলাকালীন উপস্থিত সবাইকে তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ৬০ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হলেও ৬৩ হাজার ডলার উত্তোলন করা। মানুষের এ সাড়া প্রদান অভিভুত আয়োজকরা।

বিভিন্নভাবে এইচবিবি থেকে এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ সেবা গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় এক লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

স্বাধীনতার মিলনমেলা এবং বার্ষিক তহবিল সংগ্রহের এই অনুষ্ঠান যেন ডেভিস শহরে হয়ে উঠেছিল উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। এ ছাড়া অন্য ভাষাভাষী এবং অন্য দেশের অতিথিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানের নতুন মাত্রা পায়। বাঙ্গালী সংস্কতি সাথে ভিন্ন সংস্কৃতি যুক্ত হওয়ায় অনুষ্ঠানটি বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠে। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এইচবিবি’র উপদেষ্টা এবং ইউসি ডেভিস পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ড. ফেইথ বাউচার।

ড. ফেইথ বাউচার বলেন, আমি খুব উপভোগ করছি। বাংলাদেশিদের স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস আমি জানি। আজকে এখানে এসে বাংলাদেশিদের মহৎ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আরও ভালো লাগছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজের দেশ ছেড়ে এখানে এসে শুধু অর্থ উপার্জনের পেছনে নিজেদের মেধা ব্যয় না করে পরিবেশ ও মানব কল্যাণে কাজ করছে। একটি দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী দেশপ্রেমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার এ এক অনন্য উদাহরণ। এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এইচবিবিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত।