প্রতিবেশীর কান ছিঁড়ে ১২ বছর শিকলবন্দি স্বপন

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: এক প্রতিবেশীর কান কামড় দিয়ে ছিঁড়ে খোলা আকাশের নিচে ১২ বছর যাবত বাঁশঝাড়ে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক স্বপন বর্মণ। হতদরিদ্র পরিবারের ওই যুবকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউপির বীরবান্দা গ্রামে। সে ওই গ্রামের পবন বর্মণের ছেলে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চিকিৎসাবঞ্চিত স্বপন বৃদ্ধ মা-বাবার বেঁচে থাকার অবলম্বন না হয়ে এখন দু:খের কারণে পরিণত হয়েছে। এদিকে স্বপনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সকল সরকারি সেবা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

স্থানীয় আজমত আলী বলেন, বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে মেহগিনি গাছের সাথে হাত পায়ে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণ। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পলিথিনে শরীর মুড়িয়ে এখানেই দিন ও রাত কাটে তার। দূর থেকে তাকে খাবার দেয় স্বজনরা। এখন ছয়ফুট দৈর্ঘের এই শিকলই তার পুরো পৃথিবী।

প্রতিবেশী নমিতা বর্মণ বলেন, ছোট বেলা থেকেই মানসিক সাম্যহীন ছিল ৩৫ বছর বয়সী যুবক স্বপন। এক সময় তার বাবা পবন বর্মণ ও মা সুচিত্রা রানী বর্মণ নানা জনের কাছ থেকে ধার দেনা করে ছেলের চিকিৎসা করান। এক পর্যায়ে সুস্থ্যও হয়। পরে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসারের হাল ধরে স্বপন। ছেলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে ভেবে পার্বতী নামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে দেন বাবা-মা। বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বপনের ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। আদর করে মেয়ের নাম রাখেন প্রীতি। এভাবেই সুখে দিন কাটছিল ওই যুবকের।

তিনি আরো বলেন, এক পর্যায়ে মানসিক বিকারগ্রস্তের পুরনো সেই রোগ স্বপনের জীবনে দুর্দশা হয়ে ফিরিয়ে আনে। যাকে তাকে কামড়াতে শুরু করে স্বপন। এভাবে তার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। একদিন পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীকে কামড় দিয়ে কান ছিঁড়ে নেয় স্বপন। পরে পরিবারের লোকজন তার হাত ও পায়ে শিকল বেঁধে বাঁশঝাড়ে বেঁধে রাখে। সেই বাঁধন আরও শক্ত করতে শিকলের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ১০টি তালা।

এক প্রশ্নের জবাবে নমিতার পাশে থাকা সুরধনী বালা বলেন, বাঁশঝাড় লাগোয়া একটি জায়গায় চটের বস্তা দিয়ে স্বপনের জন্য ল্যাট্রিন তৈরি করা হয়েছে। হাত পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় সেখানে সে প্রাকৃতিক কাজ সারে।

সুরধনী বালা আরো বলেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে (স্বপন) স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। সেই সাথে ফিরে আসবে তার স্ত্রী। মা বাবার আদর ভালবাসা পাবে শিশুটি।

স্থানীয় জেনন কিন্ডার কার্ডেন স্কুলের অধ্যক্ষ জহির রায়হান বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক স্বপন বর্মণের স্বজনরা অতি দরিদ্র। তার মা, বাবা ও ভাই সুজন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের বা কখনও স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়।

তিনি মনে করেন, সরকার যদি এ বিষয়ে সদয় হয় তাহলে এই পরিবারটি ভীষণভাবে উপকৃত হবে।

এদিকে বাবার চিকিৎসার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে স্বপনের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা প্রীতি রানী বর্মণ।

স্বপনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে জানিয়ে শ্রীবর্দী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি তার গৃহের অবস্থা জরাজীর্ণ তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্প থেকে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এছাড়া তার মেয়ের জন্য শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হবে।