মেলান্দহে রেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ

মেলান্দহ উপজেলার একটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

মো. মুত্তাছিম বিল্লাহ্, মেলান্দহ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের নেই কোন গেটম্যান। শুধুমাত্র সতর্কতা মূলক সাইনবোর্ড দিয়েই এর দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা।

মেলান্দহ রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, মেলান্দহ উপজেলায় রেলপথে রয়েছে মোট ১২টি লেভেল ক্রসিং। এর মধ্যে মাত্র ৪টিতে গেটম্যান আছে। বাকি ৮টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে অরক্ষিত এবং তাতে নেই কোন গেটম্যান। এই সব লেভেল ক্রসিং গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনসহ জনসাধারণ। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু এবং বাড়ছে পঙ্গুত্ব।

স্থানীয়রা বলছে, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিবছরই দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। ২০১৫ সালে উপজেলার শ্যামপুর টনকি বাজার লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনার পরে সেখানে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকী অরক্ষিত যেসব লেভেল ক্রসিং রয়েছে সেগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও সবাই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে এতেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে উপজেলার শাহজাদপুরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা গেছে, গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পরিবহনসহ সাধারণ জনগণ। সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে লেখা রয়েছে, ‘এই লেভেল ক্রসিং -এ গেটম্যান নাই, পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যে কোন রূপ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন।’

অরক্ষিত রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, কখন ট্রেন আসে তার তেমন ঠিক ঠিকানা নেই। রাতে ইসলামপুরের দিক থেকে যদি ট্রেন আসে শীতের রাতে তাহলে রাস্তা থেকে দেখা যায় না। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অটোচালক ইব্রাহিম বলেন, গেটম্যান না থাকায় ট্রেন আসছে কি না গাড়ি থামিয়ে আগে দেখতে হয়। আবার শীতের রাতে ঠিকমতো দেখাও যায় না। হঠাৎ কোন সময়ে যদি না দেখা হয়। তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেসব জায়গায় গেটম্যান নেই, সেসব জায়গায় দ্রæত গেটম্যান দেওয়ার দাবি জানাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গেটম্যান বলেন, স্টেশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময়ই ট্রেন আসার অনেক আগে লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হয়। মোবাইল করে অন্য গেটম্যানদের কাছে থেকে জেনে নিতে হয়।

তিনি আরও জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখে ব্যারিয়ার দিয়ে ট্রেন পার করতে হয়। রাতে ঘন কুয়াশায় ট্রেনের শব্দ শুনে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার গভীর রাতে ট্রেনের আলো দেখে কিংবা হুইসেল শুনে ব্যারিয়ার দিতে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।

মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশনে কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) মফিজুর রহমান বলেন, গেটম্যান নিয়োগের ব্যাপারে এটি আমাদের কোন কাজ না। এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভালো জানে। তবে যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে।