শেরপুরে নৌকা প্রতীক পুড়ানো ও ভাংচুরের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

শেরপুর সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়নে আগুনে পুড়ে যাওয়া নৌকা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর : শেরপুরে ইউপি নির্বাচনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী অফিসঘর ভাংচুর এবং প্রতীক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ এনেছেন এক আওয়ামী লীগ প্রার্থী। ৯ নভেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার ধলা ইউপির আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রইসউদ্দীন এ অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনই নৌকা পুড়িয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী।

রইসউদ্দীন বলেন, ৮ নভেম্বর গভীর রাতে ধলা ইউপির কড়ইতলা বাজার ও বাকেরকান্দা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুলের বাড়ির কাছে দুইটি কাঠের তৈরি নৌকা প্রতীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া একটি নৌকা ভাংচুর করা হয়। পাশাপাশি একটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পরে ৯ নভেম্বর সকালে সমর্থকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসি।

এলাকায় নৌকার জোয়ার দেখে প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার সমর্থকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে ওই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরও বলেন, আমার পক্ষে যারা নির্বাচনী কাজে অংশ গ্রহণ করছে প্রতিপক্ষরা ওইসব লোকের বাড়িতে গিয়ে নানাভাবে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ ঘটনাটি তিনি শেরপুর-১ (সদর) আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিককে জানাবেন। সেই সাথে এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও দলীয় সভা করবেন।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনই নৌকা পুড়িয়েছে উল্লেখ করে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, এলাকার ৯০ ভাগ ভোট আমার পক্ষে। ঘটনার দিন ৮ নভেম্বর সকালে নৌকার প্রার্থী স্থানীয় কড়ইতলায় নির্বাচনী জনসভা করে। অন্যদিকে আমি নয়াপাড়ায় সভা করি। তাদের সভায় সব চেয়ার খালি ছিল আর আমার মিটিংয়ে বিপুল জনসমাগম ছিল। এ অবস্থা দেখে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তাই নির্বাচন থেকে আমাকে দূরে রাখতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনই নৌকা পুড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি জানান, এ ঘটনাটি ইউএনও, এসপি, ওসি ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। এবং এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত চাওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও এ ঘটনার প্রতিবাদে ৯ নভেম্বর বিকালে সভা আহ্বান করা হয়েছে।

এ সময় তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, এবার এই ইউপি নির্বাচনে সৎ এবং অন্যায়ের সাথে আপসহীন প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে নৌকা প্রার্থীর লোকজন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ইতোমধ্যে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন এর আগে ২০০৯ সালে গরুর গাড়ি ও ২০১৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে প্রতিপক্ষের কাছে পরাজিত হন।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সদর থানার ওসি মনসুর আহমেদ বলেন, এ বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তদারকি করবেন বলে তিনি জানান।

নৌকা প্রতীক পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি শুনেছেন জানিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঘটনাটির সার্বিক বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে। এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৮টি ওয়ার্ড এবং ৭০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত সদর উপজেলার ধলা ইউপিতে আগামী ১১ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।