চারদিনেও সন্ধান মেলেনি কওমি মাদরাসার তিন ছাত্রীর, চার শিক্ষক জেলহাজতে

তিন শিশু ছাত্রী নিখোঁজ মামলায় গ্রেপ্তার জামালপুরের ইসলামপুরের দারুত তাকওয়া মহিলা কওমি মাদরাসার চারজন শিক্ষক। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ইসলামপুর প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

নিখোঁজের চারদিনেও সন্ধান মেলেনি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চরের দারুত তাকওয়া মহিলা কওমি মাদরাসার তিন ছাত্রীর। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক মাদরাসাটির মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষককে ১৫ সেপ্টেম্বর একজন অভিভাবকের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সাতদিনের রিমান্ডের আবেদনসহ চার শিক্ষককে আদালতে হাজির করা হলে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করে তাদেরকে জামালপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।

নিখোঁজ তিন ছাত্রীর পক্ষে এক ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ১০ (১) ধারায় ইসলামপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক মাদরাসাটির মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষককে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর ভোর রাত থেকে ওই মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির তিনছাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বয়স নয় বছর থেকে ১১ বছরের মধ্যে। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পায়নি তাদের স্বজন ও পুলিশ।

মামলার বাদীর অভিযোগ, ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি ওই মাদরাসায় গিয়ে তার মেয়েকে রাতের খাবার দিয়ে আসেন। পরের দিন ১২ সেপ্টেম্বর সকালে পুনরায় মেয়েকে সকালের খাবার দিতে গিয়ে জানতে পারেন তার মেয়ে ও তার দুই সহপাঠীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিরা তিন ছাত্রীকে পাচার করার উদ্দেশ্যে যৌন শোষণ ও বা অন্যান্য কোন অপরাধ সংঘটনের জন্য অপহরণ করে আটক রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন অপহৃতা ওই ছাত্রীর বাবা।

গ্রেপ্তার শিক্ষকদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় এবং বাকি দু’জনের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়। তারা হলেন- শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝড়াকুড়া গ্রামের মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে মো. আসাদুজ্জামান (৩৩) ও একই উপজেলার পাইকুড়া গ্রামের মো. রুকনুজ্জামানের মেয়ে মোছা. রাবেয়া আক্তার (২০), জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সিরাজাবাদ গ্রামের মো. মজিবর রহমানের ছেলে মো. ইলিয়াস আহমেদ (৩০) ও একই উপজেলার দরিয়াবাদ গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে মোছা. সুকরিয়া (১৯)। ওই চারজন শিক্ষককে আসামিভুক্ত করা ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও চার-পাঁচজনকে এই মামলায় আসামিভুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে গ্রেপ্তার চারজন শিক্ষককে জামালপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাহমুদুল হাসান। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য করে আসামিদের জেলহাজতে আটক রাখার আদেশ দেন আদালত।

ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সুমন মিয়া বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ওই মাদরাসার তিন শিশু ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর মাদরাসাটির মুহতামিম মো. আসাদুজ্জামানসহ চারজন শিক্ষককে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আটক করা হয়। তাদেরকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে নিখোঁজ ছাত্রীদের সম্পর্কে সন্তোষজনক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ এক ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলায় আটক চার শিক্ষককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে তাদেরকে জামালপুর আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেছে। নিখোঁজ তিন শিশুর সন্ধানে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।