জামালপুরে ভুল তথ্যে ফায়ারসার্ভিস পৌঁছতে বিলম্ব, সাত দোকান পুড়ে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি

জামালপুর শহরের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

আগুন লেগেছে জামালপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর বাজারে। নৈশপ্রহরী ফায়ার সার্ভিসে ফোন করেছেন শুধুমাত্র ‘বোর্ডঘর বাজার’ উল্লেখ করে। সেই ফোন পেয়েই ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা অগ্নিনির্বাপনের দুটি গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যায় পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বগাবাঈদ বোর্ডঘর বাজারে।

ফায়ার সার্ভিস যেতে দেরি দেখে ঘটনাস্থল থেকে ব্যবসায়ীরা ফের ফোন করলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছুতে সময় লেগে যায় প্রায় ৪০ মিনিট। অথচ সময় লাগার কথা ছিল মাত্র সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ততক্ষণে সাতটি দোকানঘর ও মালামাল পুড়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১ নভেম্বর ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জামালপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর বাজারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে কয়েকটি দোকানে আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সারিবদ্ধ আশপাশের আরো কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় নৈশপ্রহরী আব্দুর রাজ্জাক ফোনে কয়েকজন দোকান মালিককে জানানোর পর তিনি ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে জামালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফোন করে জানান যে, বোর্ডঘর বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন লাগছে। এরই মধ্যে দোকান মালিক ও স্থানীয় শত শত গ্রামবাসী বালতি-পাতিলে করে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন। কিন্তু সময় যায়, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আর আসে না।

তখন দোকান মালিকরা আবারো ফোন করে জানতে পারেন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলে গেছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে অন্তত সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বগাবাঈদ বোর্ডঘর বাজারে। ফের ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনা ঘটনাস্থল জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর বাজারে পৌঁছুতে সময় লেগে যায় প্রায় ৪০ মিনিট। ততক্ষণে সারিবদ্ধ মার্কেটের সাতটি দোকান ঘর ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অথচ প্রথম ফোনে ঘটনাস্থল সঠিকভাবে জানানো হলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছা যেত। তবে ভুল তথ্যের কারণে বিলম্বে পৌঁছেও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়ায় ওই মার্কেটের অন্তত আরো ১০-১২টি দোকান আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী আজাদের ফাহিম ভ্যারাইটি স্টোর, মো. আনিছের মুদি দোকান, মার্কেটের ঘর মালিক মহসিনের নিজের দোকান, আনিছের চায়ের দোকান, ডা. ছামিদুল ইসলামের সুমিতা ফার্মেসী ও আছাদের সেলুনের দোকান এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক শামীম হোসাইনের সারা সাফা ভ্যারাইটি স্টোর নামের দোকানের কসমেটিকপণ্য, ডিশ ক্যাবল লাইনের মালামাল, তিন সেট কম্পিউটার, একটি ভিডিও ক্যামেরা, ফ্রিজসহ সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে এই সাতজন ব্যবসায়ীর অন্তত পক্ষে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক শামীম হোসাইন এ প্রতিবেদককে বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। আগুন এক সাথে লেগে যাওয়ায় কোন দোকান থেকে লেগেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। নৈশপ্রহরী যদি সঠিক লোকেশন দিয়ে ফোন করতো তাহলে হয়তো ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে আসতে সময় লাগতো সবোর্চ্চ ১০ মিনিট। আর যদি সময় মতো তারা আসতো তাহলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে হয়তো রক্ষা পাওয়া যেতো। আগুন লেগে সাতটি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়লাম।

জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. আফছার উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কাছে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে একটি ফোন আসে। ঘটনাস্থল বলা হয় বোর্ডঘর বাজার। দ্রুত আমাদের কর্মীরা অগ্নিনির্বাপনের গাড়ি নিয়ে চলে যায় জামালপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বগাবাঈদ বোর্ডঘর বাজার এলাকায়। পরে আবার ফিরতি ফোন আসে আগুন লেগেছে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলপাড়া বোর্ডঘর বাজারে। পরে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয় আমাদের কর্মীরা। কিন্তু ততক্ষণে সাতটি দোকানঘর ও মালামাল পুড়ে যায়। সেখানে পৌঁছুতে একটু সময় লাগলেও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আশপাশের আরো অনেকগুলো দোকান আগুনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে প্রথম ফোনে ঘটনাস্থলের সঠিক তথ্য দিলে হয়তো আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো যেতো। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছি। এখনি বলা যাচ্ছে না যে সেখানে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।