‘করোনা প্রতিরোধ সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় আতংকে তারা’

করোনা প্রতিরোধক সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই কৃষকদের বাড়ি গিয়ে কৃষি সংক্রান্ত পরামর্শ দিচ্ছেন জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফাজুল হক বাবু। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে কৃষি বিভাগের ২১৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর হাতে এখনও পৌঁছায়নি করোনা সুরক্ষা সামগ্রী। ফলে তাদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই জেলার দুই লাখ ৮১ হাজার ৭৯০টি কৃষক পরিবারকে কৃষি বিষয়ক সেবা দিয়ে যেতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মীরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধক মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্য সকল সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় মাঠে কাজ করতে গিয়ে তারা আতংকে আছেন। অন্যদিকে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, করোনা প্রতিরোধক মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্য সকল সুরক্ষা উপকরণ না থাকায় আমরা আতংকিত। আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে সেবা দিতে যেমন কাজ করতে হচ্ছে অন্যদিকে হতদরিদ্রদের মাঝে সরকারের দেওয়া খাদ্য সামগ্রী বিতরনে কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়া বোরো মৌসুমে লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। এ সময় প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। এর বাইরে কৃষকদের মাঝে শস্য বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। যে কারণে শঙ্কা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি বলেন, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী চেয়ে ঢাকার খামারবাড়ির কৃষি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এবং ডিপ্লোমা কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি ওইসব উপকরণ।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, কৃষকরা প্রায় সবাই নিরক্ষর যে কারণে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে তারা তেমন কিছু বুঝে না। আমরা যখন বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে মাঠে যাই তখন এক সাথে বহু কৃষকের সমাগম হয়। তখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়না। এ জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যায়। এছাড়া প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে যেমন কৃষকদেরকে পরামর্শ দিতে হয় অন্যদিকে অনেক কৃষক পরামর্শ নিতে অফিসে আসে। এসময় তাদেরকে দূরত্ব বজায় রাখতে বললেও তারা কথা শোনেনা। আসলে আমাদের নিরাপত্তা বলতে কিছু নাই।

তিনি আরও বলেন, কৃষি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে কৃষি কর্মকর্তারা সপ্তাহের সাতদিনই অফিস করছেন। এবং কৃষকদের নিয়মিত সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য প্রণোদনা বরাদ্দসহ করোনা সুরক্ষা সামগ্রী পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, কৃষি সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ভিজিডি প্রোগ্রামের চাল বিতরণের কাজ করতে হয়। যে কারণে শতশত মানুষের সমাগমের মধ্যে থাকতে হয়। তাই সুরক্ষার জন্য কয়েকজন সহকর্মী মিলে নিজেদের টাকায় হ্যান্ডগ্লাভস, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক কিনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

নকলার বানেশ্বর্দী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আফাজুল হক বাবু বলেন, আমরা সব রকমের সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও দেশে খাদ্য ঘাটতি যেন না হয় তার জন্য আমরা কাজ করছি।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় স্বাভাবিক কারনেই কৃষিখাত হলো অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। তাই একে সচল রাখতে সরকারি ছুটিতে বাসায় বসে না থেকে সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছি।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রণোদনা পাবেন কি না সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, আমাদের কাছে নূন্যতম মাস্ক পর্যন্ত নেই। ঝুঁকি নিয়ে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনের কাজ করার ফলে তিনি নিজেও যে কোন সময় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, করোনাকালে ধান, শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া সীমিত আকারে কাজ করার কথা থাকলেও আমরা সাপ্তাহিক ছুটি পর্যন্ত ভোগ না করে প্রতিদিন অফিস করছি। আমরা দুই ঘন্টা কাজ করলে কৃষক সেবা পাবে না।

তিনি মনে করেন, করোনা প্রতিরোধক মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্য সকল সুরক্ষা সামগ্রী সরকার থেকে সরবরাহ করা হলে কৃষি বিভাগের কর্মীরা আরও উৎসাহ পাবে। এবং নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে কাজ করতে পারবে।

প্রণোদনা এবং সুরক্ষা সামগ্রী পেতে ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের ২১৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জেলার দুই লাখ ৮১ হাজার ৭৯০টি কৃষক পরিবারকে কৃষি বিষয়ক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।