সানন্দবাড়ীতে প্রতিবন্ধী শাহিদার আর্তনাত

শাহিদা

বোরহানউদ্দিন, সানন্দবাড়ী (দেওয়ানগঞ্জ) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

প্রতিবন্ধী শাহিদার আর্তনাত শোনার কেউ নেই। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম সানন্দবাড়ী লম্বাপাড়া। একটি দরিদ্র পরিবার ছফর আলী তার সহধর্মিণী শামেলা বেগমকে নিয়ে সুখের সংসার করছিল।তাদের ঘরে জন্ম নেয় একে একে তিন সন্তান, শাহিদার (২২), বাবুল (১৮) ও লাভলু (১৫) । বিধিবাম শাহিদা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছে। তার ছোট ভাই বাবুল সে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। বাবা ছফর আলী মারা যাবার পর মা শামেলা বেগম ছোট সন্তান লাভলুকে নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে।

লম্বাপাড়া গ্রামে গরীব দুখী প্রতিবন্ধী শাহিদার কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে আসছে। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে অভাব অনটন, দেখার কেউ নেই। চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক কেউই পাশে নেই। প্রতিবন্ধী শাহিদা বাবা হারা উপার্জনক্ষম পরিবারের বড় মেয়ে।

ছোট ভাই বাবুল বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, আরেক ভাই লাভলু বিধবা মাকে নিয়ে চার সদস্যের সংসার।

প্রতিবন্ধী শাহিদা সানন্দবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাশ করে। পাশ করে সে বসে নেই। তার আকাঙ্ক্ষা আরও লেখাপড়া করবে। কিন্ত এই গরীব সংসারে লেখা পড়া কি সম্ভব। তার মা শামেলা বেগম কষ্টকরে দুপয়সা যোগাড় করে একবেলা না খেয়ে মেয়ে জন্য টাকা যোগাড় করে কাগজ কলম কিনে দিত।

সানন্দবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমান জানান, শাহিদা লেখা পড়া, পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় শিক্ষকরা সহযোগিতা করেছে।

শাহিদার সংগ্রাম থেমে নেই, সে গরীব হলেও তার মনের আকাঙ্ক্ষা ছিল অনেক বড়। সে সানন্দবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি ও ২০১৭ সালে ডিগ্রি পাশ করে। প্রতিবন্ধী শাহিদাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামসহ শিক্ষকগণ উৎসাহ যোগিয়েছেন।

২০১৭ সালে বিএ পাশ করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য শাহিদা ৩ মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। শাহিদা বলেন, আমি বাড়ির সামনে রাস্তার সাথে ছোট দোকান দিছি। অতি কষ্টে পায়ে টিপে কম্পিউটারের কাজ করি।বর্তমান করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ। এখন আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বড়ই কষ্টে দিন যাপন করছি। কোন বিষয় জানতে চাইলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে, বৃষ্টির ফোটার মত চোখে জল গড়িয়ে পড়লো।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচন আসলে সব নেতা, প্রার্থী এসে বলেন, আপনারা আমাদের ভোটার, ভোট দেন। পরে দেখবো। নির্বাচনের পরে আর কেউ খোঁজ খবর নেয় না।

প্রতিবন্ধী শাহিদা আরও বলেন, আমি হাঁটতে পারি না, কিছু ধরতে পারি না। লেখা পড়া করার জন্য মানুষের দ্বারে হাত পাততে পারি না।লজ্জায় কি করি?

তিনি দুঃখ করে বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক সামর্থবান ব্যক্তি রয়েছে, কিন্ত অনেক দিন গড়িয়েছে কোন ব্যক্তি এক কেজি চাল নিয়ে এগিয়ে আসেনি। এখন একটাই প্রার্থনা আল্লাহ কাছে বেঁচে থাকার ভরসা।