নালিতাবাড়ীতে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ

উম্মে হাবিবা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের ভুল রক্তের রিপোর্টের কারণে এক কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। ওই কিশোরীর নাম উম্মে হাবিবা। আর অভিযোগ ওঠা প্যাথলজি সেন্টারের নাম সেবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ওই কিশোরী মৃত্যুবরণ করে। এ নিয়ে কিশোরীর স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেছেন। অন্যদিকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

কিশোরীর বাবা লোকমান হোসেন জানান, তিনি পেশায় রিকশা চালক। রাজধানীর মিরপুরে স্বপরিবারে বসবাস করেন। ৩০ মার্চ তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার ফুলপুর গ্রামে স্ত্রী-সন্তানসহ গ্রামের বাড়ি আসেন। আসার পর থেকেই তার ৫ম শ্রেণি পড়–য়া কিশোরী কন্যা উম্মে হাবিবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তার মামা রফিক ৩ এপ্রিল হাবিবাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এসময় কর্তব্যরত উপ-সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা গোলাম মুস্তোফা বেশ কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার পরামর্শ দেন। পরে হাসপাতালের সামনে থাকা সেবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে হাবিবার পরীক্ষা-নীরিক্ষা করানো হয়। ওই পরীক্ষায় অন্যান্য রিপোর্টের পাশাপাশি হাবিবার রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ বলে জানানো হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী হাবিবার শরীরে জন্ডিস ও রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় চিকিৎসকে গালাম মুস্তোফা তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

এসময় হাবিবাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে একই গ্রুপের রক্তদাতা সংগ্রহ করে ৪ এপ্রিল দুপুরে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সদর হাসপাতালে রক্তের ক্রসমেচিংয়ে রক্তের গ্রুপ এক না হওয়ায় হাবিবার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ বলে প্রমাণিত হয়। পরে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় আরো নির্ভরযোগ্য হওয়ার জন্য হাবিবার রক্তের নমুনা শেরপুর শহরের এপোলো ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ নির্ণয় হয়। ততক্ষণে বিকেল সাড়ে পাঁচটা বেজে যায়। এমতাবস্থায় ‘ও’ পজেটিভ রক্ত সরবরাহ করার আগেই সন্ধ্যা পৌণে ছয়টার দিকে সদর হাসপাতালে মারা যায় কিশোরী হাবিবা।

হাবিবার মা জোসনারা ও বোন সালমা বলেন, এ ঘটনায় ওই দিন রাতে হাবিবার মরদেহ নিয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা ও স্থানীয় প্রেসক্লাবে যোগাযোগ করে মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করে জানান, সেবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয় করা না হলে আমরা সময় মতো রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করতে পারতাম। কিন্তু ভুল রিপোর্টের কারণে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের মেয়ে মারা গেল। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।

অন্যদিকে সেবা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এখানে সিবিসি, ভিডাল ও এসবি এ তিনটি পরীক্ষা করানো হয়। রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়নি।

নাম প্রকাশনা করার শর্তে একজন প্যাথলজিস্ট বলেন, সিবিসি’র অর্থ হলো ‘কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট’। অর্থাৎ রক্তের গ্রুপ ও হিমোগ্লোবিনসহ সব কিছু নির্ণয়।

এ সম্পর্কে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, আমরা ঘটনা শুনেছি। সঠিক রিপোর্ট অনুযায়ী সময় মতো রক্ত সরবরাহ করা গেলে হয়তো রোগী বেঁচে যেতো। বিষয়টি পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।