রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়িতে হামলা, এক মাদক কারবারির জেল

জামালপুরে রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে মাদকবিরোধী অভিযানে নামা ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ির বহরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাস। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর শহরের রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় একজন মাদক কারবারিকে আটক করাকে কেন্দ্র করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ির বহরে যৌনকর্মীদের হামলায় একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের কয়েক রাউন্ড ফাঁকাগুলি বর্ষণ ও টাস্কফোর্স সদস্যদের বন্দুকের বাটের পিটুনিতে কয়েকজন যৌনকর্মী আহত হয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা টাস্কফোর্সের সমন্বয়ে পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জামালপুর শহরের রানীগঞ্জ যৌনপল্লীতে মাদকবিরোধী অভিযান চালায় জেলা টাস্কফোর্স। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মো. আবু আব্দুল্লাহ খানের নেতৃত্বে এ অভিযানের সময় যৌনপল্লীর বাইরে বংশখালের গলি থেকে চিহ্নিত মাদক কারবারি ও যৌনপল্লীর মুদি দোকানি আব্দুল হালিমকে আটক করে টাস্কফোর্স সদস্যরা।

পরে তাকে নিয়ে যৌনপল্লীর সর্দারনি কবিতার ঘরে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় যৌনকর্মীদের সাথে টাস্কফোর্স সদস্যদের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে যৌনকর্মীরা হামলা চালানোর চেষ্টা করলে টাস্কফোর্স সদস্যরা বন্দুকের বাট দিয়ে যৌনকর্মীদের পিটুনি দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কবিতা, আলেয়া ও গোলাপীসহ ৬/৭ জন যৌনকর্মী আহত হয়। এক পর্যায়ে অভিযানে থাকা টাস্কফোর্সের পুলিশ ৩/৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে যৌনপল্লী থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বিক্ষুব্ধ যৌনকর্মীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ির বহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে একটি মাইক্রোবাসের পেছনের কাঁচ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। যৌনপল্লীর ওই ঘটনায় আটক মাদক কারবারি আব্দুল হালিমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শহরের চালাপাড়া এলাকা থেকে মো. আলম নামের আরেক মাদক কারবারিকে আটক করে টাস্কফোর্স।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভিযান শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক আব্দুল হালিমকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন নির্বাহী হাকিম মো. আবু আব্দুল্লাহ খান। সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল হালিম জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের পর তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক মো. আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে পুলিশের নির্যাতনের শিকার যৌনপল্লীর সর্দারনি কবিতা অভিযোগ করে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘বাইরে থেইকা কারে ধরছে তা নিয়া আমাদের কোনো কথা নাই। তবে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে এবং আমাদের কয়েকজন যৌনকর্মীকে বন্দুকের বাট দিয়া পিটাইছে এবং মারধর করছে। তারা ৫-৬ বার গুলিও করছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’

জামালপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবীর ভূইয়া বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের পর মাদক কারবারি আব্দুল হালিমকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আটক মো. আলমকে খালাস দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তিনি আরও জানান, অভিযানের সময় কোনো ফাঁকাগুলি বর্ষণ এবং যৌনকর্মীদের মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাদকবিরোধী অভিযানে বাঁধা দেওয়া এবং মাইক্রোবাস ভাংচুরের অভিযোগে রানীগঞ্জ যৌনপল্লীর যৌনকর্মী কবিতাসহ ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।