বাহাদুরাবাদে মসজিদের মক্তবের শিক্ষক কর্তৃক এক শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার

ধর্ষক মনিরুল ইসলাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মসজিদের মক্তবের একজন শিক্ষক কর্তৃক প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পাঁচ বছরের এক মেয়েশিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২ অক্টোবর সকালে এ ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষক মনিরুল ইসলাম (৪০) গা ঢাকা দিয়েছেন। উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ভাঙার গ্রাম জামে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত মক্তবে এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষক মনিরুল ইসলাম উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ভাঙার গ্রামের মো. শুক্কুর আলীর ছেলে। তিনি বিবাহিত। অপরদিকে ধর্ষণের শিকার শিশুটি একই ইউনিয়নের ভাটির গ্রাম এলাকার দরিদ্র এক গার্মেন্টসকর্মী দম্পতির মেয়ে। ওই দম্পতি ঢাকায় থাকেন। পরিবারের অন্যান্য স্বজনরা শিশুটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ২ অক্টোবর দিবাগত রাতে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ভাঙার গ্রাম জামে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচির মক্তবে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে স্থানীয় অন্তত: ৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত মসজিদের ভেতরে পাঠদান চলে। ২ অক্টোবর ১০/১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। ওই মক্তবের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম কিছুক্ষণ পাঠদান করার পর অন্যান্য শিশুদের মসজিদের সামনের কামরাঙ্গা গাছ থেকে কামরাঙ্গা খাওয়ার কথা বলে মসজিদ থেকে বাইরে যেতে বলে। সহপাঠীরা বাইরে গেলে শিক্ষক মনিরুল ইসলাম পাঁচ বছর বয়সের এক মেয়েশিক্ষার্থীকে মসজিদের ভেতরে কোনায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটির যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত শুরু হয় এবং কান্নাকাটি শুরু করলে শিক্ষক মনিরুল ইসলাম কৌশলে ওই শিশুসহ সকল শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দ্রুত মসজিদ থেকে কেটে পড়েন। ঘটনার পর থেকেই ওই শিক্ষক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।

পরিবারের স্বজনরা জানতে পেরে শিশুটিকে মসজিদ থেকে উদ্ধার করে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাকে রাতেই জামালপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে স্বজনরা ২ অক্টোবর দিবাগত রাত একটার দিকে শিশুটিকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের এক নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৩ অক্টোবর দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অবুঝ এই শিশুটি হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে।

জামালপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) চিকিৎসক মো. ফেরদৌস হাসান বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষার কোনো আবেদন করা হয়নি। পুলিশের আবেদন পেলেই শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে। তবে শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিছু আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জামালপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, দেওয়ানগঞ্জে মক্তবের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম কর্তৃক প্রাক-প্রাথমিকের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিবুর রহমান ৩ অক্টোবর বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে মসজিদে মক্তবের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনাটি শুনেছি। শিক্ষকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই ধর্ষণের শিকার শিশুটির অভিভাবকের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন,  এই নরপশুকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জামালপুরে ধর্ষণের ভয়াবহ রূপ বন্ধের দাবিতে আগামী ৬ অক্টোবর রবিবার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও শিশু কল্যাণ কমিটির উদ্যোগে জামালপুর জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি দেওয়া হবে।