অবশেষে আয়শার আশ্রয় হলো শেখ রাসেল পুনর্বাসন কেন্দ্রে

আইনি প্রক্রিয়া শেষে সদর থানা থেকে উন্নয়ন সংঘের জিম্মায় নিয়ে যাওয়া হয় আয়শাকে (কমলা ওড়নাপরা)। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

আয়শা নামের এক মেয়েকে ঢাকা জামালপুরে নিয়ে এসে ছেলেধরা সন্দেহে আটক রিকশাওয়ালা জহিরুল এখন জামালপুর জেলহাজতে। অন্যদিকে উন্নয়ন সংঘের জিম্মায় আয়শার স্থান হয়েছে জামালপুরের শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মেয়েদের নিবাসে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৩১ জুলাই জামালপুর সদর থানা পুলিশ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আয়শা সুস্থ হয়ে উঠেছে। পুলিশ ৩১ জুলাই সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে সদর থানায় নিয়ে যায়। আয়শাকে জামালপুরের উন্নয়ন সংঘের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির আইনসহায়ক কোনো অভিভাবক না পাওয়া পর্যন্ত তাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের জামালপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। উন্নয়ন সংঘের আইআইআরসিসিএল প্রকল্পের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে মেয়েটিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যান। ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক শুভঙ্কর ভট্টাচার্য আয়শাকে আশ্রয় দেন।

আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আয়শার আইন সহায়ক কোনো অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী হিসেবে সেখানে থাকবে সে। তাকে উন্নয়ন সংঘের পক্ষ থেকে সবরকম আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’

এদিকে আয়শার অপহরণকারী রিকশাওয়ালা জহিরুলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করে ৩১ জুলাই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, অসহায় আয়শার বয়স আনুমানিক চৌদ্দ বছর। তার বাবার বাড়ি বরিশালে। বাবা রহমত হাওলাদার বেঁচে নেই। মা হনুফা বিবি পুনরায় বিয়ে করেছেন। আয়শারও সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। রিকশাওয়ালা স্বামী রাকিবকে নিয়ে সে ঢাকার মধুবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। মধুবাগ এলাকার আরেক রিকশাওয়ালা জহিরুলের (৩০) বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে। রাকিবের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্দুত্বের সূত্র ধরে তার বাসায় যাতায়াত ছিল জহিরুলের। এই সুযোগে জহিরুল ২৯ জুলাই সকালে আয়শাকে নিয়ে ঢাকা থেকে জামালপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। বাসে করে আয়শাকে নিয়ে গত সোমবার রাতে জামালপুরে আসে জহিরুল।

পরে তার গ্রামের সরিষবাড়ীর ভাটারায় যাওয়ার পথে ২৯ জুলাই রাত পৌনে একটার দিকে জামালপুর সদরের মেষ্টা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে ঘোরাঘুরি করছিল। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক জহিরুলকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে মেয়েটিকেসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আসাদের জিম্মায় দেয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে মেষ্টা ইউনিয়ন পরিষদের সবাই বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় আয়শা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। মেষ্টা ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান কিনু মেয়েটিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। একই সাথে সদর থানা পুলিশ জহিরুলকে আটক করে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী হিসেবে রাখার শর্তে আয়শাকে উন্নয়ন সংঘের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তাকে অপহরণকারী রিকশাওয়ালা জহিরুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটির আইন সহায়ক কোনো অভিভাবক পাওয়া গেলে পরবর্তীতে তাকে সদর থানার মাধ্যমেই হস্তান্তর করা হবে।’

sarkar furniture Ad
Green House Ad