জামালপুরে এনএসভিসি প্রকল্পের উদ্যোগে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনএসভিসি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল হান্নান। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে ২০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের অর্থনৈতিক ও পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে জামালপুরে শুরু হয়েছে নিউট্রিশন সেনসেটিভ ভ্যাল্যু চেইনস ফর স্মলহোল্ডার্স ফারমার্স (এনএসভিসি) প্রকল্প। গত দুই বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত করার জন্য ২৩ জুন উন্নয়ন সংঘের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ডিটিআরসি)তে অনুষ্ঠিত হয় এক মতবিনিময় সভা।

সভায় মূল প্রবন্ধ এবং প্রকল্পের ওপর লিখিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের এনএসভিসি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল হান্নান।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম মোল্লা, এনএসভিসি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল হান্নান ও উন্নয়ন সংঘের পরিচালক কর্মসূচি নারায়ন চন্দ্র দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। এসময় উন্নয়ন সংঘ ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৩৫জন সাংবাদিক অংশ নেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবং এর সহযোগী সংস্থা উন্নয়ন সংঘ এর মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন পাঁচ বৎসর মেয়াদি প্রকল্পটি জামালপুর জেলার তিনটি উপজেলা সদর, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ এ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এর যাত্রা শুরু করে। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেইন অ্যাফের্য়াস এন্ড ট্রেড, অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন অস্ট্রেলিয়া।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পরিবারের আয় বাড়ানো ও পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি পুষ্টি সংবেদনশীল কৃষির ধারণাকে কাজে লাগাচ্ছে বা কৌশল গ্রহণ করেছে। কৃষি উৎপাদনকে আয় ও ক্রয় ক্ষমতাবৃদ্ধি বৈচিত্র্যময় খাবার এর উৎস এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ চলছে।

জামালপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

প্রকল্পটি নির্বাচিত কৃষক পরিবারগুলো থেকে ২৫ জন করে প্রান্তিক নারী ও পুরুষ কৃষকদের সমন্বয়ে ৮০০টি উৎপাদক দল গঠন করেছে। এই দলগুলোর কৃষি ব্যবসা সংক্রান্ত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প থেকে কৃষি উৎপাদন কলা-কৌশল, ফসল উত্তোলন পরবর্তি পরিচর্যা, বাণিজ্যিক কৃষির আর্থিক জ্ঞান ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ক মোট ১০৮টি ব্যাচে ৮০০ জন কৃষক দল নেতাকে-৪ ধরনের কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। উৎপাদক দল এর পাশাপাশি ২৩৩টি পুষ্টি দল গঠন করে তাদের বসত-বাড়িতে সবজি বাগান, পুষ্টি বাগান, খাবারের পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কে ৪৮টি ব্যাচে মোট ১২০০ জন পুষ্টি দলের মাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৭৫০ পরিবারকে সবজি বীজ ও ফলের চারা প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষনের পর তাদের ইনপুট সাপোর্ট হিসেবে বীজ, চারা ও বেড়া তৈরির উপকরণ প্রদান করা হয়েছে বাড়ির পাশে পুষ্টি বাগান তৈরি করার জন্য। গর্ভবতী নারী ও ০-২ বছর বয়সের শিশুর মা ও ০-২ বছর শিশুর প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ৩২১৫ পরিবারে ৫ টি করে মোট ১৬০৭৫ টি ডিম পাড়া মুরগি প্রদান করা হয়েছে। বানিজ্যিকভাবে চাষের জন্য নির্বাচিত কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন সবজি ও মাঠ ফসলের বীজ প্রদান করা হয়েছে। উৎপাদক দল সমূহের চাহিদা অনুসারে মানসম্মত কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং উৎপাদিত ফসল দলগতভাবে বিক্রির ক্ষেত্রে উপযুক্ত কোম্পানি ও ফসলের পাইকার/বেপারীদের সাথে বাজার সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা/সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। নারীর অর্থনৈতি কক্ষমতায়ন ও কৃষি ভ্যাল চেইন এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৪ জন আগ্রহী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আংশিক ৫০০,০০০ টাকা সমমূল্যের আর্থিক ভর্তুকী প্রদান করা হয়েছে যাতাদের কলের লাঙল, স্প্রে মেশিন, সেচ মেশিন ক্রয়, বীজ ও সারের ব্যবসা শুরুর জন্য সহায়ক হয়েছে।

জামালপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

পুষ্টি অবস্থার উন্নতির জন্য ‘নবজাতক ও শিশুর খাবার’ বিষয়ক তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুষ্টির উৎস হিসেবে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় বাগান তৈরির অভ্যাস গঠনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রকল্পের পক্ষ থেকে বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় বাগান তৈরির জন্য এবং বানিজ্যিক চাষাবাদের জন্য পর্যায়ক্রমে ৮৪৭৫ জন এবং ১৫০০ জনের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহন বাড়ানো, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য মোট ৬৬টি‘ পুষ্টিকর খাবার রান্নার প্রদর্শনী ’কমিউনিটি পর্যায়ে প্রদর্শন করা হয়েছে যা ৩২১৫টি পরিবারের গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।

নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকা বৃদ্ধির জন্য এনএসভিসি প্রকল্প ‘চেঞ্জ মেকার’/‘পরিবর্তন তৈরিকারী’ পদ্ধতির সাহায্যে ৬০টি ম্যানকেয়ার দল গঠন করেছে। ম্যানকেয়ার পদ্ধতির মাধ্যমে ৮৪০ টি সেসন পরিচালনার মাধ্যমে ৬০০ পরিবারের মধ্যে অংশগ্রহনমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে ন্যায় সঙ্গত সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে যা নারীদের প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে সহায়ক হয়। উক্ত বিষয়ে প্রকল্প থেকে ৮০ টি লোকজ সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে ২৪ হাজার ৭০০ জন মানুষ তথ্য পেয়েছে। এ ছাড়া ১২০টি মিটিং সংগঠিত করা হয়েছে যেখানে ৬ হাজার ৭২০ জন মানুষ ম্যানকেয়ার বিষয়ে জেনেছে এবং কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোট ৬৬টি দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং এর মাধ্যমে প্রকল্পের তথ্য প্রদান করা হয়েছে এবং কমিটির সদস্যগন প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও ফসলের রোগবালাই সম্পর্কে এলাকায় আগাম তথ্য প্রদান করে যাচ্ছে।

২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি প্রান্তিক কৃষকদের স্থানীয়ভাবে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে পুষ্টি ও অর্থনেতিক ক্ষমতায়নে অবদান রাখতে পারবে।