জামালপুরে গৃহকর্মী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবিটি প্রতীকী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরে দরিদ্র গৃহকর্মী এক তরুণীকে ধর্ষণের পর অন্ত:স্বত্ত্বা করার অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মেলান্দহ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ১১ মে দুপুরে ওই গৃহকর্মী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ওই গৃহকর্মীর বয়স আনুমানিক ১৯ বছর। ধর্ষণের পর কৌশলে তাকে বিয়ে দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে একটি মৃত কন্যাসন্তান প্রসব করায় ঘটনা ফাঁস হয়। এতে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ১০ মে রাতে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ি ঘেরাও করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। গ্রামবাসীর রোষাণল থকে রক্ষা পেতে মাজেদুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, জেলার মেলান্দহ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলামের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে। তিনি স্থানীয় মো. মোতালেব হোসেনের ছেলে। তার স্ত্রী স্থানীয় শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তাদের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২ হাজার টাকা মাসিক মজুরিতে প্রতিবেশী অবিবাহিত এক তরুণীকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই তরুণীর বাবা বেঁচে নেই। তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।

ভুক্তভোগী গৃহকর্মী অভিযোগ করে জানান, তার কাজে যোগদানের কয়েকদিন পর বাড়ির মালিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম ৮ সেপ্টেম্বর দিনের বেলা তাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। সেদিন ছিলো শনিবার। শনিবার তার অফিস ছুটি থাকায় এবং তার স্ত্রী ওইদিন স্কুলে থাকার সুবাধে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এভাবে একাধিক শনিবারে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ফলে তিনি অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি মাজেদুল ইসলাম টের পেয়ে কাউকে না বলার জন্য তাকে হুমকি দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজের অপকর্মকে ভিন্ন খাতে নিতে কৌশলে বেশ টাকাপয়সা খরচ করে গত ৮ মার্চ গৃহকর্মীকে একই ইউনিয়নের পিঙ্গলহাটি গ্রামের এক দরিদ্র যুবকের কাছে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে গৃহকর্মী ওই তরুণী স্বামীর বাড়িতে সংসার করে আসছিলেন। কিন্তু তার স্বামীকে ঘটনা খুলে বলতে সাহস পাননি। এক পর্যায়ে ১০ মে ভোর ৪টার দিকে তিনি একটি মৃত কন্যাসন্তান প্রসব করেন।

বিয়ের দুই মাসের মধ্যেই নতুন বউয়ের সন্তান প্রসবের বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। সন্তান প্রসবের কিছুক্ষণের মধ্যে তার স্বামী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ও তার মৃত সন্তানসহ তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ভুক্তভোগী তরুণী তার মা ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের কাছে শিক্ষা কর্মকর্তার অপকর্মের ঘটনা খুলে বললে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ১০ মে রাতে শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলামের বাড়ি ঘেরাও করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর থানা পুলিশ এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহিরুল ইসলাম মৃত কন্যাশিশুটি উদ্ধার করে জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

এদিকে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ পরবর্তী অন্ত:স্বত্ত্বা এবং সন্তান প্রসবের ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে তার স্ত্রীও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই তরুণী নিজে বাদী হয়ে তাকে ধর্ষণ ও অন্ত:স্বত্ত্বা করার অভিযোগে শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলামকে আসামি করে ১১ মে দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহিরুল ইসলাম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘মৃত কন্যাশিশুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শিশুটির পিতৃত্বের পরিচয় উদঘাটনের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। এজন্য শিশুটির শরীরের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ১০ মে রাত থেকেই মামলাটির একমাত্র আসামি শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’