সরিষাবাড়ীতে উত্যক্ত করায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অন্তরার আত্মহত্যা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর ও মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অন্তরা সাহা (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের সাঞ্চেরপাড় গ্রামে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহার মেয়ে। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।

মেয়েটির বাবার অভিযোগ, স্থানীয় মূলবাড়ী এলাকার মো. তানিন তালুকদার নামের এক যুবক তার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করতো। সে ২০ এপ্রিল রাস্তায় জোর করে মুখচেপে ধরে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছড়ানোর কারণেই আত্মহত্যা করেছে অন্তরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তরা সাহা সরিষাবাড়ী পৌর এলাকার সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে সরিষাবাড়ী আরামনগর বাজারের একটি কোচিং সেন্টার থেকে পড়া শেষে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বাড়িতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মা নমিতা রাণী সাহা তাকে না পেয়ে ঘরে তার কক্ষে খুঁজতে যান। তিনি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেই অন্তরাকে ঘরের ধর্ণার সাথে ঝুলন্ত দেখতে পান। পরে স্বজনরা তাকে দ্রুত সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. সাহেদুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসক সাহেদুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই মেয়েটি মারা গেছে।’

ওই ছাত্রীর শোকার্ত বাবা নারায়ণ চন্দ্র সাহা অভিযোগ করে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ি এলাকার মতি তালুকদারের ছেলে তানিন তালুকদার আমার মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্যক্ত করে আসছে। তাকে এবং তার বাবা-মাকে অনেক বলেছি। কোনো লাভ হয়নি। ২০ এপ্রিল বাড়ি থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে অন্তরার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মুখচেপে ধরে সেলফি তুলে ওই যুবক তার ফেসবুকে পোস্ট দেয়। ওই ছবি ফেসবুক মেসেনজারে তার বন্ধুদের কাছেও ছড়িয়ে দেয় সে। বিষয়টি অন্তরা আমাদের জানালে ওই যুবকের বাবা-মাকে জানানো হয়। কিন্তু এতেও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। ফেসবুকে ছবি দেওয়ার পর থেকেই আমার মেয়ে মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এদিকে খবর পেয়ে রাতে সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আশরাফুল আলম সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মেয়েটির সুরতহাল লেখেন। পরে তারা রাত পৌনে ১১টার দিকে অন্তরার মরদেহ থানায় নিয়ে যান।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘অন্তরার মরদেহ থানায় আনা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ পেলে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’