শেরপুরের তিনটি আসনেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি : নির্বাচনী প্রচারণায় ভাটা

সুজন সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

শেরপুরে তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। আসনগুলো হলো শেরপুর-১ (সদর), শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী), শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী)। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ওই সবগুলো আসনে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে নতুন মামলা ও পুলিশের নানামুখী তৎপরতার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, অর্ধশতাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন বহু নেতাকর্মী। ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় এখন ভাটা পড়েছে।

জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতীতে ১৯টি মামলা করা হয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রতীক বরাদ্দের পর আরো ২১টি মামলা করা হয়। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাশাপাশি নকলায় এক আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয় বিএনপির ৬১ জনকে সুনির্দিষ্ট করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ১২৫ জনের নামে থানায় মামলা করেছেন। একই থানায় আবার পুলিশের পক্ষ থেকেও আরো একটি মামলা করা হয়। আর নালিতাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে হামলার অভিযোগে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। অন্যদিকে শেরপুর সদর আসনে প্রতীক বরাদ্দের পর বিভিন্ন মামলায় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ প্রার্থীর বাড়ির আশপাশ ঘিরে রাখছে। এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই না টেলিফোনেও নানা রকমের হুমকি ধামকি দেয় পুলিশ। এলাকার নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রটিতে পুলিশের হয়রানীর কারণে দলীয় পোষ্টার সাঁটানো যাচ্ছেনা।

শ্রীরবদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম দুলাল বলেন, নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। যে নেতা আসামি তার বাড়িতে হানা দিচ্ছে, আবার যে আসামি না তার বাড়িতেও হানা দিচ্ছে পুলিশ। এ উপজেলার পাঁচ-ছয়টি ইউনিয়নের নেতাকর্মী এখন এলাকাতে নেই বললেই চলে।

ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতার আলী বিল্লাল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী সভা থেকে এ ইউনিয়নের সভাপতি লুৎফর রহমানকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনিসহ আরও অনেক নেতা বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।

বিএনপি মনোনীত শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, সবগুলো আসনে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে পুলিশের দেওয়া নতুন মামলা ও নানামুখী তৎপরতার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে পারছেন না শেরপুরের তিনটি আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রায় অর্ধশতাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপির শতশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য রাতের বেলা তাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

সূত্র জানায়, শেরপুর-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর শুরুতেই হোচট খায় স্থানীয় বিএনপি। নকলা ও নালিতাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম মতিয়ার চৌধুরীর প্রচারণা কেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুরের মামলার যাতাকলে পড়ে এখন কাহিল হয়ে পড়েছেন বিএনপি প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা।

জানা যায়, গত ১৪ ডিসেম্বর নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের মধ্যপোয়াবাগ এলাকার রামেরকান্দি মোড়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালিয়ে ছয়জনকে গুরুতর আহত করে। এ ছাড়া ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আটজন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ।

এ ছাড়া ১৫ ডিসেম্বর নালিতাবাড়ী শহরের গোবিন্দনগর মহল্লায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রে হামলার অভিযোগে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এ প্রসঙ্গে নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমীন বলেন, ১৫ ডিসেম্বর রাতে আমাদের প্রার্থী ফাহিম চৌধুরীর নকলা উপজেলার চরকামানীপাড়া গ্রামের বাড়িতে তার সাথে সাক্ষাত করতে যাই। এ সময় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের (মতিয়া-বাদশা) সমর্থিতদের মধ্যে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশ আমাদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে। আমরা যাতে সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে না পারি এ জন্যই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের বিএনপি সমর্থীত প্রার্থী ফাহিম চৌধুরী বলেন, এই আসনটিতে নির্বাচনী পরিবেশ পাচ্ছিনা। নকলায় আমি রীতিমত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। শুধু আমি না বিএনপির ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিন কাটছে একইভাবে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে চলছে হামলা, দোকানপাটে চলছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এখন ভয়ে ও আতংকে দিন কাটছে নেতাকর্মীদের ও তাদের স্বজনদের। পুলিশের দেওয়া মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন বহু কর্মী সমর্থক।

অন্যদিকে শেরপুর-১ (সদর) আসনের বিএনপি প্রার্থী চিকিৎসক সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কা পুলিশ প্রশাসনের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে বলেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষনিক ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশ তার বাড়ির আশপাশ ঘিরে রাখছে। এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই না টেলিফোনেও নানা রকমের হুমকি ধামকি দেয় পুলিশ। তার এলাকার নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রটিতে পুলিশি হয়রানীর কারণে দলীয় পোষ্টার সাঁটানো যাচ্ছেনা।

নকলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় টালকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হযরত আলী বাদী হয়ে ৬১ জনকে সুনির্দিষ্ট করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ১২০ থেকে ১২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউনুস আলী বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেছেন।

অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এসব আসামিদের গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সে তাদের দলের লোক। প্রকৃত পক্ষে দলীয় বিবেচনায় কাউকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই।