জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠি ডটকম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের জনসংযোগ, শোডাউন, কেন্দ্রে তদবির, দলীয় মনোনয়ন চিঠি প্রাপ্তি, মনোনয়নপত্র দাখিল, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া, ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনে আপিলে টিকে যাওয়া, দলীয় প্রতীকের চূড়ান্ত চিঠি প্রাপ্তি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ নানান হিসেব নিকেশ মিটিয়ে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে ৩০০ আসনে। একই অবস্থা জামালপুরের পাঁচটি আসনেও। অপেক্ষা এখন ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিনের।
৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জামালপুর জেলার পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চূড়ান্ত তালিকায় নাম ওঠেছে ৩২ জন প্রার্থীর। এর মধ্যে এবার জামালপুরের কোনো আসনেই নেই নারী প্রার্থী। নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও। পাঁচটি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিক অবস্থান, সামর্থ্যসহ নানান তথ্য উপাত্ত থেকে যা আভাস পাওয়া যাচ্ছে, আর তা হলো এবার জামালপুরের তিনটি আসনে ভোটের লড়াই হবে মূলত ‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যেই। তবে জামালপুর-১ ও জামালপুর-২ এই দুটি আসনে জাতীয় পার্টির দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থেকে যাওয়ায় আসন দুটিতে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পাঁচটি আসনের মধ্যে মাত্র একজন প্রার্থী এবার নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এর নির্বাচনে সরাসরি ভোটে এবং ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাড়ি মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামে।
এ ছাড়া পাঁচটি আসনের মধ্যে এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দু’জন নতুন মুখও যুক্ত হয়েছেন এই ভোটের লড়াইয়ে। তাও আবার একই আসনে। অর্থাৎ জামালপুর-৫ (সদর) আসনে। এ আসনে নতুন দুই মুখ হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন। তিনি একজন শিল্পপতি। তার বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের খুপিবাড়ি এলাকায়। অন্যজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি জামালপুর পৌরসভায় দুবার নির্বাচিত হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। তার বাড়ি জামালপুর পৌরসভার রশিদপুর এলাকায়।
পাঁচটি আসনে এবার মোট ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার ২৬৪ এবং নারী ভোটার রয়েছে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫ জন। এবার জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে সবচে বেশি ভোটার রয়েছে জামালপুর-৫ (সদর) আসনে। সদরের মোট ভোটার সংখ্যা এবার ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩১ জন। যারা যারা ভোটের লড়াইয়ে লড়বেন নিচে তা তুলে ধরা হলো। একই সাথে থাকছে প্রতিটি আসনে ভোট কেন্দ্র, ভোট কক্ষ, মোট ভোটার এবং নারী ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা।
জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে রয়েছেন ৭ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ (আওয়ামী লীগ/নৌকা), সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত (বিএনপি/ধানের শীষ), সাবেক মন্ত্রী এম এ ছাত্তার (জাতীয় পার্টি/লাঙ্গল), মো. সিরাজুল হক (গণফোরাম/ উদীয়মান সূর্য), মো. জাহাঙ্গীর আলম (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি/ কাঁঠাল), মো. সুরুজ্জামান (ন্যাপ/কুড়েঘর), মো. আব্দুল মজিদ (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ/ হাতপাখা)।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৮০১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৫ জন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯২ হাজার ৮০৭ জন এবং নারী ভোটার ৯৫ হাজার ৮০৬ জন। বকশীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৭ হাজার ৯৯৪ জন এবং নারী ভোটার ৭৯ হাজার ৬৭৯ জন। এ আসনে মোট ১২০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোট কক্ষ থাকবে ৬৩১টি। এর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৬৯টি ভোট কেন্দ্রে ৩২৬টি ভোট কক্ষ এবং বকশীগঞ্জ উপজেলায় ৫১টি ভোট কেন্দ্রে ৩০৫টি ভোট কক্ষ থাকবে।
জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে রয়েছেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান (আওয়ামী লীগ/নৌকা), সাবেক সংসদ সদস্য এ. ই. সুলতান মাহমুদ বাবু (বিএনপি/ধানের শীষ), শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মোস্তফা আল মাহমুদ (জাতীয় পার্টি/লাঙল), প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান (সিপিবি/কাস্তে) এবং হাফেজ মো. মিনহাজ উদ্দিন (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ/ হাতপাখা)।
এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ১৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১১ হাজার ৩২০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ৮৬৬ জন। এ আসনে মোট ৮৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোট কক্ষ থাকবে ৪৭১টি।
জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে রয়েছেন ৬ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম (আওয়ামী লীগ/নৌকা), মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল (বিএনপি/ধানের শীষ), মো. মুনজুর আহাদ হেলাল (জাতীয় পার্টি/লাঙল), শিবলুল বারী রাজু (সিপিবি/কাস্তে), মো. আব্দুল হাকিম শান্তি (জাকের পার্টি/গোলাপ ফুল) এবং মো. বোরহান উদ্দিন (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ/ হাতপাখা )।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৫ হাজার ১৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ১৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ জন। মাদারগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৪ হাজার ৪০১ জন এবং নারী ভোটার ৯৩ হাজার ২৪২ জন। মেলান্দহ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৬১৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩২ জন। এ আসনে মোট ১৩৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোট কক্ষ থাকবে ৮০৫টি। এর মধ্যে মাদারগঞ্জ উপজেলায় ৫২টি ভোট কেন্দ্রে ৩৫০টি ভোট কক্ষ এবং মেলান্দহ উপজেলায় ৮৭টি ভোট কেন্দ্রে ৪৫৫টি ভোট কক্ষ থাকবে।
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে রয়েছেন ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য চিকিৎসক মুরাদ হাসান (আওয়ামী লীগ/নৌকা), সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম (বিএনপি/ধানের শীষ), মো. মুখলেছুর রহমান বস্তু (জাপা/লাঙল), সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল (বিএনএফ/টেলিভিশন) এবং আলী আকবর (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ/ হাতপাখা)।
এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৩ জন। এ আসনে মোট ৮৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোট কক্ষ থাকবে ৪৬০টি।
জামালপুর-৫ (সদর) আসনে রয়েছেন ৯ জন প্রার্থী। তারা হলেন- শিল্পপতি প্রকৌশলী মো. মোজাফফর হোসেন (আ.লীগ/নৌকা), জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন (বিএনপি/ধানের শীষ), জেলা সিপিবির সভাপতি শেখ মো. আক্কাছ আলী (সিপিবি/কাস্তে), মো. বাবর আলী খান (জাতীয় পার্টি-জেপি/বাইসাইকেল), মো. আব্দুল করিম সরকার (বিএনএফ/টেলিভিশন), সৈয়দ ইউনুছ আহাম্মেদ (ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ/ হাতপাখা), আল আমীন জুরহমান (বাংলাদেশ মুসলিম লিগ/হারিকেন), মো. বেলাল উদ্দিন (খেলাফত আন্দোলন/বটগাছ) এবং মো. নজরুল ইসলাম আকন্দ (জাকের পার্টি/গোলাপ ফুল)।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৭ জন। এ আসনে মোট ১৫০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ভোট কক্ষ থাকবে ৮৬৮টি।