ঢাকা ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে ডা. জাকির হোসেনের মহতি উদ্যোগ অপরাজেয়র সংযোগ প্রকল্পের জামালপুর কার্যালয়ে চিকিৎসা শিবির অনুষ্ঠিত জামালপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত চরপাকেরদহ ইউনিয়নে ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার হুতি ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’: ট্রাম্প জামালপুর সিংহজানি উচ্চবিদ্যালয়ে তারুণ্যমেলা সমাপ্ত শেরপুরে উন্নয়ন সংঘের স্ক্রিপ্ট প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত শিশু কিশোরদের সুরক্ষায় সিভিএ এর প্রারম্ভিক সভা অনুষ্ঠিত

বকশীগঞ্জে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে গর্ভের সন্তান বিক্রি থেকে রক্ষা পেলেন এক নারী

তিন শিশু সন্তানের সাথে বকশীগঞ্জের সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা রাবেয়া। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

তিন শিশু সন্তানের সাথে বকশীগঞ্জের সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা রাবেয়া। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি॥
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে গর্ভের সন্তান বিক্রি করা থেকে রক্ষা পেলেন সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা দরিদ্র নারী রাবেয়া বেগম। ঋণগ্রস্ত রাবেয়া আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে এবং অভাবের তাড়নায় গর্ভের সন্তান তার বোনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির মৌখিক চুক্তি করেন। ইউএনও’র হস্তক্ষেপে তিনি তার সন্তান বিক্রি করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার মেরুচর ইউনিয়নের ভূমিহীন মো. জাহাঙ্গীর ও রাবেয়া দম্পতির চার সন্তান রয়েছে। মাস তিনেক আগে তারা স্থানীয় এনজিও আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকার ঋণ নেন। ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে স্ত্রী সন্তান রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। ঋণের টাকা থেকে বাঁচতে রাবেয়া স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে বকশীগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিমপাড়ায় তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। অন্ধ বাবা আঙ্গুর হোসেনের অভাবের সংসারে চার সন্তানসহ রাবেয়া দিনে এক বেলা খেয়ে চলে আসলেও, এনজিও তাদের পিছু ছাড়েনি। এক পর্যায়ে ঋণ থেকে বাঁচতে তার গর্ভের সাত মাসের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তার নি:সন্তান বোন দিলারী বেগমের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির মৌখিক চুক্তি করেন। ইতিমধ্যে দিলারীর কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল।

বিষয়টি জানাজানি হলে বকশীগঞ্জের ইউএনও দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ৫ অক্টোবর বিকেলে বকশীগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিমপাড়ায় রাবেয়ার বাবার বাড়িতে যান। এ সময় রাবেয়া ঋণের টাকার যন্ত্রণা ও অভাবের তাড়নায় তার গর্ভের সন্তান আগাম বিক্রি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে ইউএনও তাকে তাৎক্ষণিক ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেন। এ ছাড়াও তার সমুদয় ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেন ইউএনও। উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তাকে সহায়তার আশ্বাস দিলে রাবেয়া বেগম তার সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।

এ ব্যাপারে রাবেয়া বেগম বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘আমার স্বামী বাড়ি থেইকা গেছে গা। পোলাপানগরে খাবার দিবার পাই না। এনজিও আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন ঋণের টাকার জন্য চাপা দিতাছে। না দিলে জেলের ভয় দেখাইছে। তাই আমার বোনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় পেটের সন্তান বিক্রির কথা দেই। ইউএনও স্যার সাহায্য করবে বলছেন। এহন আমি আর আমার পেটের সন্তান বিক্রি করমু না।’

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় গর্ভের সন্তান বিক্রির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ঘটনাটি জানার পর আমি রাবেয়ার সাথে যোগাযোগ করে তার বাসায় যাই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে তাকে নগদ ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ভিজিডি কার্ড, গর্ভকালীন ও মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল প্রকার সহায়তা এবং তার সমুদয় ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দিলে রাবেয়া তার সন্তান বিক্রি করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে।’

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন

বকশীগঞ্জে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে গর্ভের সন্তান বিক্রি থেকে রক্ষা পেলেন এক নারী

আপডেট সময় ০৬:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৮
তিন শিশু সন্তানের সাথে বকশীগঞ্জের সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা রাবেয়া। ছবি : বাংলার চিঠি ডটকম

বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি॥
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে গর্ভের সন্তান বিক্রি করা থেকে রক্ষা পেলেন সাত মাসের অন্ত:সত্ত্বা দরিদ্র নারী রাবেয়া বেগম। ঋণগ্রস্ত রাবেয়া আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে এবং অভাবের তাড়নায় গর্ভের সন্তান তার বোনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির মৌখিক চুক্তি করেন। ইউএনও’র হস্তক্ষেপে তিনি তার সন্তান বিক্রি করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার মেরুচর ইউনিয়নের ভূমিহীন মো. জাহাঙ্গীর ও রাবেয়া দম্পতির চার সন্তান রয়েছে। মাস তিনেক আগে তারা স্থানীয় এনজিও আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকার ঋণ নেন। ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে স্ত্রী সন্তান রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। ঋণের টাকা থেকে বাঁচতে রাবেয়া স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে বকশীগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিমপাড়ায় তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। অন্ধ বাবা আঙ্গুর হোসেনের অভাবের সংসারে চার সন্তানসহ রাবেয়া দিনে এক বেলা খেয়ে চলে আসলেও, এনজিও তাদের পিছু ছাড়েনি। এক পর্যায়ে ঋণ থেকে বাঁচতে তার গর্ভের সাত মাসের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তার নি:সন্তান বোন দিলারী বেগমের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির মৌখিক চুক্তি করেন। ইতিমধ্যে দিলারীর কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন তিনি। বাকি টাকা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল।

বিষয়টি জানাজানি হলে বকশীগঞ্জের ইউএনও দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ৫ অক্টোবর বিকেলে বকশীগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিমপাড়ায় রাবেয়ার বাবার বাড়িতে যান। এ সময় রাবেয়া ঋণের টাকার যন্ত্রণা ও অভাবের তাড়নায় তার গর্ভের সন্তান আগাম বিক্রি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে ইউএনও তাকে তাৎক্ষণিক ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেন। এ ছাড়াও তার সমুদয় ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নেন ইউএনও। উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তাকে সহায়তার আশ্বাস দিলে রাবেয়া বেগম তার সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।

এ ব্যাপারে রাবেয়া বেগম বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘আমার স্বামী বাড়ি থেইকা গেছে গা। পোলাপানগরে খাবার দিবার পাই না। এনজিও আশা ও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন ঋণের টাকার জন্য চাপা দিতাছে। না দিলে জেলের ভয় দেখাইছে। তাই আমার বোনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় পেটের সন্তান বিক্রির কথা দেই। ইউএনও স্যার সাহায্য করবে বলছেন। এহন আমি আর আমার পেটের সন্তান বিক্রি করমু না।’

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলার চিঠি ডটকমকে বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় গর্ভের সন্তান বিক্রির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ঘটনাটি জানার পর আমি রাবেয়ার সাথে যোগাযোগ করে তার বাসায় যাই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে তাকে নগদ ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ভিজিডি কার্ড, গর্ভকালীন ও মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল প্রকার সহায়তা এবং তার সমুদয় ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দিলে রাবেয়া তার সন্তান বিক্রি করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে।’