ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস : জামালপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত এসএসসিতে জামালপুর সদরের ২৪০ কৃতী শিক্ষার্থী পেল সংবর্ধনা দেওয়ানগঞ্জে বর্ষালী ধানের বীজ রোপণে কৃষকদের সর্বনাশ ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম সেমিফাইনালে লড়বে সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহ উপজেলা দল শিক্ষার্থীদের গাছের চারা দিল শেরপুরের শাইন্ ও বার্ড ক্লাব গরুচুরির অপবাদে ট্রাকচালককে পিটিয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেওয়ানগঞ্জে সাত পুলিশ কর্মকর্তা পেল শ্রেষ্ঠ সম্মাননা শিশু ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বকশীগঞ্জে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তরা পেল ঢেউটিন, শুকনা খাবার বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

টুং টাং শব্দে মুখর ইসলামপুরের কামারশালা

সরঞ্জামাদি বানাতে ব্যস্ত কামাররা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সরঞ্জামাদি বানাতে ব্যস্ত কামাররা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম

বছর ঘুরে আসে কোরবানি ঈদ। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। অন্যদিকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বানাতে ছুটছেন কামারশালায়।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দে ততই কামার পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামার শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ফকিরপাড়ার কামারপাড়ায়, চাড়িয়া পাড়া, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি, চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার।

অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেছে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামার শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বটি ৭০০ থেকে হাজার টাকা, পশু জবাই ছুরি ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করছেন।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। পৌর শহরের ফকির পাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী রঞ্জিত কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পানতা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপ-দাদার পেশা, এ পেশাই জীবন বাঁচাই, ছাড়তেও পারিনা। তারপরেও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

সুদিন কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যবসা তত বাড়ছে। তবে আমাদের জ্বালানি কয়লা, লোহার দাম বাড়ছে। কিন্তু জিনিসের দাম বাড়েনি। সারা বছর কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়।

কাচ্চু কর্মকার বলেন, বাপ দাদার পৈতৃক পেশা করে জীবন বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের। আমাদের জন্য ডিজিটাল কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈতৃক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

চাড়িয়া পাড়া কামারবাড়ীর বিপ্লব কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোন ঋণ পাইনা। কয়লার পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই। তারপরেও ঈদের সামনে কষ্ট করে কাজ করতেছি বেশি কামানোর আশায়।

দোকানে আসা ক্রেতা মোবারক হোসেন বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ আসলে দাম একটু বাড়ে। এক হাজার ২০০ টাকা, তবুও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদি বানাতে ব্যয় হয়। এতক্ষণ অপেক্ষায় থেকে টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে ব্যস্ত কামারীরা।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস : জামালপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

টুং টাং শব্দে মুখর ইসলামপুরের কামারশালা

আপডেট সময় ০৯:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
সরঞ্জামাদি বানাতে ব্যস্ত কামাররা। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, বাংলারচিঠিডটকম

বছর ঘুরে আসে কোরবানি ঈদ। ঈদকে ঘিরে চারিদিকে আনন্দ উৎসব ও চলছে কোরবানির পশু কেনার ধুম। অন্যদিকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বানাতে ছুটছেন কামারশালায়।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দে ততই কামার পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্রেতা সাধারণদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামারদের দোকানগুলো। কামার শিল্পীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ফকিরপাড়ার কামারপাড়ায়, চাড়িয়া পাড়া, রেলগেইট, মধ্যে দরিয়াবাদ, দিঘলকান্দি, চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার, গংগাপাড়া, মহলগিরি বাজার, নাপিতের চর বাজারে দা, বটি, চাপাতি, ছুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কয়লার দগদগে আগুনে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন, দা, বটি, ছুরি, কুরাল, চাকুসহ ধারালো হাতিয়ার।

অনেকেই আবার পুরাতন দা, ছুরিগুলো মেরামতের জন্য কামারের দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন। ঈদের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও জমে উঠেছে কামারীর দোকান।

কয়েকজন কামার শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বটি ৭০০ থেকে হাজার টাকা, পশু জবাই ছুরি ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি করছেন।

ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, টুং টাং শব্দ ততই বেড়ে চলেছে। দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে হরেক রকমের দা, ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। পৌর শহরের ফকির পাড়া কামারপাড়া ও চাড়িয়াপাড়া কামারপাড়া এলাকায় কামার শিল্পীরা সকলেই হিন্দু সম্প্রাদায়ের। তাদের সকলেরই পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এ পেশা।

ফকির পাড়া কামার শিল্পী রঞ্জিত কর্মকার বলেন, আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পানতা ফুরায়। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবে অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপ-দাদার পেশা, এ পেশাই জীবন বাঁচাই, ছাড়তেও পারিনা। তারপরেও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

সুদিন কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ব্যবসা তত বাড়ছে। তবে আমাদের জ্বালানি কয়লা, লোহার দাম বাড়ছে। কিন্তু জিনিসের দাম বাড়েনি। সারা বছর কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে ওই সময় কোন উপার্জন না থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাতে হয়।

কাচ্চু কর্মকার বলেন, বাপ দাদার পৈতৃক পেশা করে জীবন বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের। আমাদের জন্য ডিজিটাল কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈতৃক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে আমাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

চাড়িয়া পাড়া কামারবাড়ীর বিপ্লব কর্মকার বলেন, আগের তুলনায় এখন কয়লা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়লা পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। আমরা আমাদের ব্যবসায় কোন ঋণ পাইনা। কয়লার পরিবর্তে গ্যাস দিয়ে কাজ করলে ভাল হইতো। এই সামর্থ আমাদের নাই। তারপরেও ঈদের সামনে কষ্ট করে কাজ করতেছি বেশি কামানোর আশায়।

দোকানে আসা ক্রেতা মোবারক হোসেন বললেন, গরু কোরবানির জন্য একটা ছুরি অর্ডার দিয়েছি। ঈদ আসলে দাম একটু বাড়ে। এক হাজার ২০০ টাকা, তবুও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোরবানির পশু কেনার যে সময় লাগে এখন তার চেয়ে বেশি সময় সরঞ্জামাদি বানাতে ব্যয় হয়। এতক্ষণ অপেক্ষায় থেকে টুং টাং শব্দে আমরা অস্থির আর উপার্জনে ব্যস্ত কামারীরা।