ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস : জামালপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত এসএসসিতে জামালপুর সদরের ২৪০ কৃতী শিক্ষার্থী পেল সংবর্ধনা দেওয়ানগঞ্জে বর্ষালী ধানের বীজ রোপণে কৃষকদের সর্বনাশ ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম সেমিফাইনালে লড়বে সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহ উপজেলা দল শিক্ষার্থীদের গাছের চারা দিল শেরপুরের শাইন্ ও বার্ড ক্লাব গরুচুরির অপবাদে ট্রাকচালককে পিটিয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেওয়ানগঞ্জে সাত পুলিশ কর্মকর্তা পেল শ্রেষ্ঠ সম্মাননা শিশু ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বকশীগঞ্জে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তরা পেল ঢেউটিন, শুকনা খাবার বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

শেরপুর : চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা কলেজ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী এবং সচেতনমহলের অভিযোগ, তার একক কর্তৃত্ব ও স্বেচ্ছাচারিতায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশের সব ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় মো. মোজাম্মেল হক প্রভাব খাটিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে নিজের অনুগত শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনে উদ্যোগী হন। পরে স্থায়ী পরিচালনা কমিটি গঠনের সময়ও তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের নাম ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার নামে একাধিক আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ কোচিং কার্যক্রমেও রয়েছে নানা অনিয়ম। একদিকে আহŸায়ক এবং অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে তিনি দ্বৈত সম্মানী গ্রহণ করেন, যা চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া ২০২৫ সালের শুরুতে অভ্যন্তরীণ কোচিং কার্যক্রমের জন্য টাকার রসিদ ব্যতীত ছাত্রীদের কাছ থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা আদায় করে কোচিং ফান্ডে জমা না রেখে তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের স্ত্রী মোছা. রিনা পারভীন, যিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অবসর গ্রহণ করেন। তিনিও কোচিং ফান্ড থেকে ৪২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। অবসরের পরে তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে মাসিক ১৭ হাজার টাকা বেতনে খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা গুরুতর স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত বলে সচেতনমহল অভিযোগ করেছেন।

সম্প্রতি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জ্যেষ্ঠতার নিয়ম উপেক্ষা করে তিনি সপ্তম স্থানে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ সদস্য মো. আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বসিয়ে দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে ভবিষ্যতে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।

প্রসঙ্গত, কলেজটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাবেক হুইপ ও দানবীর জাহেদ আলী চৌধুরীর মায়ের নামে। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. মো. শহিদুল আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সম্মানিত নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে মোজাম্মেল হকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম ও সুনাম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবক ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যা কিছু হয়েছে, আমি তা সকল শিক্ষকদের মতামতের মাধ্যমেই করেছি। এর সকল প্রমাণও রয়েছে আমার কাছে। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এ প্রতিবেদককে বলেন, চৌধুরী ছবরুন্নেছা কলেজের অন্য একটি বিষয়ে এর আগেও তদন্ত করা হয়েছিল। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ বিষয়েও পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস : জামালপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

আপডেট সময় ০৯:১২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চৌধুরী ছবরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী এবং সচেতনমহলের অভিযোগ, তার একক কর্তৃত্ব ও স্বেচ্ছাচারিতায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশের সব ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় মো. মোজাম্মেল হক প্রভাব খাটিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে নিজের অনুগত শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনে উদ্যোগী হন। পরে স্থায়ী পরিচালনা কমিটি গঠনের সময়ও তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের নাম ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ‘পকেট কমিটি’ গঠন করেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার নামে একাধিক আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ কোচিং কার্যক্রমেও রয়েছে নানা অনিয়ম। একদিকে আহŸায়ক এবং অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে তিনি দ্বৈত সম্মানী গ্রহণ করেন, যা চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া ২০২৫ সালের শুরুতে অভ্যন্তরীণ কোচিং কার্যক্রমের জন্য টাকার রসিদ ব্যতীত ছাত্রীদের কাছ থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা আদায় করে কোচিং ফান্ডে জমা না রেখে তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের স্ত্রী মোছা. রিনা পারভীন, যিনি গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অবসর গ্রহণ করেন। তিনিও কোচিং ফান্ড থেকে ৪২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। অবসরের পরে তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে মাসিক ১৭ হাজার টাকা বেতনে খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা গুরুতর স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত বলে সচেতনমহল অভিযোগ করেছেন।

সম্প্রতি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জ্যেষ্ঠতার নিয়ম উপেক্ষা করে তিনি সপ্তম স্থানে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ সদস্য মো. আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বসিয়ে দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে ভবিষ্যতে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।

প্রসঙ্গত, কলেজটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাবেক হুইপ ও দানবীর জাহেদ আলী চৌধুরীর মায়ের নামে। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ড. মো. শহিদুল আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলের অন্যতম সম্মানিত নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে মোজাম্মেল হকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম ও সুনাম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবক ও স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যা কিছু হয়েছে, আমি তা সকল শিক্ষকদের মতামতের মাধ্যমেই করেছি। এর সকল প্রমাণও রয়েছে আমার কাছে। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এ প্রতিবেদককে বলেন, চৌধুরী ছবরুন্নেছা কলেজের অন্য একটি বিষয়ে এর আগেও তদন্ত করা হয়েছিল। অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ বিষয়েও পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।