চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: ১০ জনের বার্সাকে বিদায় করে সেমিফাইনালে পিএসজি, এমবাপ্পের জোড়া গোল

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক :

কিলিয়ান এমবাপ্পের দুই গোলে ১০ জনের বার্সেলোনাকে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৪ ব্যবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই(পিএসজি)।

রাফিনহার গোলে ১২ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। ২৯ মিনিটে রোনাল্ডো আরাউজোর লাল কার্ড পিএসজির ভাগ্য বদলে দেয়। প্রথম লেগে ৩-২ গোলের জয়ে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত আর নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ওসমানে ডেম্বেলে ও ভিটিনরা পিএসজির হয়ে সমতা ফেরান। এরপর এমবাপ্পে শেষ কাজটুকু করেছেন। ফরাসি এই তরুণের জোড়া গোলে ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মত শেষ চার নিশ্চিত করেছে প্যারিসের জায়ান্টরা। আরো একবার সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, যাদের সাথে গ্রুপ পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে পিএসজি।

ম্যাচ শেষে অল-রাউন্ড অবদানের জন্য এমবাপ্পের প্রশংসা করে পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে বলেছেন, ‘কিলিয়ানকে ধন্যবাদ। এভাবেই একটি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়, এমবাপ্পে আজ আরো একবার তার প্রমান দিয়েছে। কিলিয়ান যখন দলকে কিছু দেয় সেটা আমাদের জন্য অনেক বেশী অর্থবহন করে।’

বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে দলকে শক্তিশালী করার পরেও কখনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি পিএসজি। কিন্তু বেশ কয়েকবারই তারা নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ সারির ক্লাবগুলোকে পিছনে ফেলেছে।

এমবাপ্পে বলেন, ‘প্যারিসের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন আমি সবসময়ই দেখি। বিশ্বের সেরা একটি দলের বিপক্ষে আরো একটি ধাপ অতিক্রম করা সেই স্বপ্নেরই বহি:প্রকাশ। এখন আমরা ওয়েম্বলিতে যাবার জন্য চেষ্টা করবো।’

২০১৫ সালে এই এনরিকের অধীনে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছিল। এনরিকের বিশ্বাস তার পিএসজি ঠিকই এবার ঘুড়ে দাঁড়াবে। নক আউট পর্বে প্রথম লেগে পরাজয়ের পর কখনই পিএসজি ফিরে আসতে পারেনি। এবার সেটাও যখন হয়েছে তখন সবকিছুই সম্ভব।

পুরো ম্যাচে সাবেক ক্লাব বার্সার সমর্থকদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে ডেম্বেলেকে। কিন্তু তারপরও তিনি মনোযোগ হারাননি।

পাঁচবারের বিজয়ী বার্সেলোনা ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর ছিল। কিন্তু ব্র্যাডলি বারকোলাকে আটকাতে গিয়ে আরাউজোর লাল কার্ড বার্সাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। ২০১৫ সালে সর্বশেষ জয়ী বার্সেলোনার জন্য ইউরোপে এটি আরো একটি বাজে রাত ছিল। কোচ জাভি হার্নান্দেজ বলেছেন, ‘১১ জনের বিরুদ্ধে ১০ জন নিয়ে লড়াই করা অনেকটাই অসম্ভব। আমি মনে করি লাল কার্ডটা অযথাই দেয়া হয়েছে। এটা খুবই অন্যায় হয়েছে।’

অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সফরকারী পিএসজি বেশ দৃঢ়তার সাথে ম্যাচ শুরু করলেও এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ১৬ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল নুনো মেনডেজকে কাটিয়ে পোস্টের কাছে ক্রস করেন। সেই বল জালে জড়াতে ভুল করেননি রাফিনহা। দুই লেগ মিলিয়ে রাফিনহার এটি তৃতীয় গোল। পিএসজির ফরোয়ার্ডরা হয়তো স্কোরশিটে ঠিকই নাম লিখিয়েছেন, কিন্তু দলটির ভাগ্য বদলে দিয়েছেন বারকোলা। এই উইঙ্গারের বাড়ানো পাসে এমবাপ্পের শট বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান রুখে দেন। এরপর বারকোলাকে রুখতে ফাউল করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আরাউজো। উরুগুইয়ান এই সেন্টার-ব্যাক বারকোলাকে পিছনে থেকে ফাউল করলে বার্সা ১০ জনের দলে পরিণত হয়। ৪০ মিনিটে বারকোলার আরো একটি ক্রস থেকে ডেম্বেলে পিএসজিকে প্রথম গোল উপহার দেন। আরাউজোর লাল কার্ডে বার্সেলোনা বাধ্য হয়ে ইয়ামালের স্থানে ডিফেন্ডার ইনিগো মার্টিনেজকে মাঠে নামায়। এ কারনে বার্সার আক্রমনভাগে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে।

এই সুযোগে পিএসজি ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয়। ৫৪ মিনিটে ভিটিনহা কোনাকুনি শটে পিএসজিকে প্রথমবারের মত এগিয়ে দেন। ইকে গুনডোগানের শট বারে লেগে ফেরত আসে, উত্তেজিত বার্সা কোচ জাভিকে টাচলাইনে অশোভন আচরনের জন্য স্ট্যান্ডে পাঠানো হয়। মাঠের ভিতরও কাতালান খেলোয়াড়রা ধীরে ধীরে নিজেদের নিয়ন্ত্রন হারাতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় হুয়াও ক্যান্সেলোর বিপক্ষে পেনাল্টি আদায় করে নেয় ডেম্বেলে। প্রথম লেগে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকা এমবাপ্পে স্পট কিক থেকে কোন ভুল করেননি। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় মৌসুমে এটি তার ৪০তম গোল। মৌসুম শেষে পিএসজির সাথে চুক্তি শেষ হয়ে গেলে রিয়াল মাদ্রিদে এমবাপ্পের যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। গুনডোগানের একটি পেনাল্টির আবেদন নাকচ হয়ে গেলে বার্সেলোনার আরো এক ব্যাকরুম স্টাফকে টাচলাইন থেকে স্ট্যান্ডে পাঠিয়ে দেন রেফারি। ৮৯ মিনিটে টার স্টেগানের ডাবল সেভ সত্ত্বেও এমবাপ্পে ঠিকই গোল আদায় করে নেন।

বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি জং বলেছেন, ‘ইউরোপে ১০ জন নিয়ে খেললে তার শাস্তি পেতেই হবে। সেমিফাইনালে যাবার জন্য আমরা লড়াই করেছি। বিষয়টি অস্বস্তিকর, কারণ আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলাম।’