তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না

জাহাঙ্গীর সেলিম ::

এদের কেউ বলে হিজড়া,  কেউ বলে তৃতীয় লিঙ্গ। আমি বলি এরা আমাদের মতো রক্তে মাংসে মানুষ। যারা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। যারা আমাদের মতই আল্লাহর বান্দা। পরিবার এবং সমাজ থেকে এরা অধিকাংশই নিগৃহীত, নিপীড়িত অনেকাংশেই নির্যাতিত। শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে এরা মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নেয়। কেউ বলে চাঁদাবাজি। ওরা অনেকাংশেই রুক্ষ আচরণ করে থাকে। সাধারণ মানুষ বিব্রত হয়। এসব অস্বীকার করছি না। সুদীর্ঘ বঞ্চনা আর অবহেলায় তারা ক্রমশই কেউ কেউ অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। কারো কারো উগ্র আচরণে অথবা লোভ, লালসা, অহঙ্কার, অহমিকা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কারো উচ্চবিলাসিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তৃতীয় লিঙ্গের সহজ, সরল সদস্যরাও তোপের মুখে পড়ে। এসব বাস্তবতাও আমি খুব কাছ থেকে দেখে আসছি। বিতর্কিত, বিচ্ছিন্ন এবং বিপদগামী মানুষ সকল গোষ্ঠী বা কমিউনিটির মধ্যেই আছে। এসব ডেঞ্জারদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে। তবে গড়ে সবাইকে এক ভাবা উচিৎ নয়।

আমরা সততার সাথে কেউ কি বলতে পারবো হিজড়াদের আচরণ পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করেছি? কেউ কি তাদের জীবনাচরণ নিয়ে মানবিক মূল্যবোধ থেকে ভেবেছেন বা চর্চা করেছেন? তাদের ভেতরেও যে অন্যরকম একটা মানবিক মানুষ বসবাস করে এবং এদের মাঝে সৃজনশীলতার যে অমিত সম্ভাবনা আছে কেউ কি তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন? এদেরকে সঠিক পরিচর্যা তথা প্রশিক্ষণ, মটিভেশন, কাউন্সিলিং করলে এরা যে সঠিক পথে হাটবে এ ধরনের চেষ্টা কেউ কি কখনো করেছেন? জানি আমার এসব প্রশ্ন শূন্যাকাশে ভেসে বেড়ালেও কারো কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাবো না।

২০২১ সালের শেষ দিকে আমরা বিএসআরএম এর আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংঘের মাধ্যমে ২৫০ জন হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানামুখী কাজ করে আসছি। তাদের আচরণ পরিবর্তন, দক্ষতা উন্নয়ন, মানবিক ও নেতৃত্ব বিকাশ বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ১৪০ হিজড়া সদস্যকে বিনাসুদে প্রতিজনকে ২৫ হাজার টাকা করে ঋণ দিয়েছি। এদের ৯৯.৯৯ ভাগ সদস্য বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছে। এদের ঋণের কিস্তি পরিশোধে কোন গাফেলতি নাই। এদের অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে। অস্বাভাবিক পর্যায়ে আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সরেজমিনে এসে পরখ করে দেখতে পারেন।

শুধু বলতে চাই এই জনগোষ্ঠীকে আপনারা কোন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। ওরাও তো মানুষ।

পাঠ্য পুস্তকে কোন বিতর্ক লেখা থাকলে তা সংশোধন করা যাবে। এ নিয়ে এত আন্দোলনের যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ওদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোন ধরনের যাতে পরিস্থিতি তৈরি না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।