এগিয়ে চলার প্রত্যয় ॥ আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ ঘোষণা করেন।

বিশেষ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে’ উত্তরণের স্বপ্ন দেখানো আওয়ামী লীগ উন্নত সমৃদ্ধ জাতির কাতারে পৌঁছানোর যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। সেজন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায় গেলে নতুন বেতন কাঠামো, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করারও অঙ্গীকার করেছে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি। ঘোষণা করেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ ১১টি বিশেষ অগ্রাধিকারও।

এসব অঙ্গীকার করে ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এর গ্রান্ড বলরুমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ও দলটির প্রধান শেখ হাসিনা, যিনি গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

ইশতেহার ঘোষণাকালে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হলে এবং বিগত বছরগুলোতে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।

২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৯৮ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার। সেখানে উগ্র সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রেখে সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ারও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করারও ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’-এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিই। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।

এবারের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মতো ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য কমানো ও সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ব্যাংকসহ আর্থিকখাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, লাভজনক কৃষ্টির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা ও যান্ত্রিকীকরণ, নিম্নআয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা ও সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক স্বাগত বক্তৃতা করেন। ‘সমৃদ্ধির আগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের বিজয়গাঁথা’ শীর্ষক দুটি ভিডিও ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। দলের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সিনিয়র সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আইনজীবী, কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবে ॥ আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ আরও যা যা করবে তা জাতির সামনে তুলে ধরেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজগঠন সুনিশ্চিত করা হবে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলমান থাকবে।

প্রতিশ্রুতির মধ্যে আরও রয়েছে- আবার ক্ষমতায় গেলে স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে। বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। কর্মপোযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণ করা হবে। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা হবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ অব্যাহত থাকবে। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে শিল্পখাতের বিকাশ ঘটানো হবে। উদ্যোক্তা শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে নেওয়া হবে যথোপযুক্ত নীতি ও কর্মসূচি।

আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের জন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, তাঁত ও রেশমশিল্পকে সংরক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা সক্ষম করা হবে। বেনারসি ও জামদানিশিল্পকে উৎসাহিত করা হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বাড়ানো হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে।

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান এবং হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্বাস্থ্য ইন্স্যুরেন্স চালু, হেলদি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক সেবা প্রচলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অটিস্টিক শিশুদের জন্য গৃহীত বিশ্বে সমাদৃত কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে।

ঘুষ-দুর্নীতি-ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা ॥ গত ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়নের পরও যেসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণের বিষয়টি অন্যতম। এবারে ইশতেহারে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশি-শক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান থাকবে বলেও অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টালারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় নির্বাচনপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে। নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।

আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাক্সিক্ষত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।

ক্ষমতায় গেলে নতুন বেতন কাঠামো ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা হবে। নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমুখী, উপাত্তনির্ভর এবং সমন্বিত দক্ষ-স্মার্ট প্রশাসন গড়ার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অধিকতর তৎপরতা বাড়িয়ে দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধে কাজ চলবে।

এতে উল্লেখ করা হয়, জনগণকে উন্নত ও মানসম্মত সেবা দেওয়া এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এর ফলে ইতোমধ্যে সরকারি সেবার মান বেড়েছে। কম সময়ে স্বল্প ব্যয়ে ও ভোগান্তি ছাড়া সেবা প্রদান এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বপ্রণোদিতভাবে সেবা দেওয়ার মনোভাব গড়ে উঠেছে। প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সরকারের তথ্য। নাগরিকরা যেন তাদের তথ্য সমন্বিতভাবে একটি প্ল্যাটফর্মে পেতে পারে, সে জন্য জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের মধ্যে ইন্টিগ্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে।

ইশতেহারে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে মেধা, সততা, যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলাবোধ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়া জীবনযাত্রার মান সমন্বয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। গৃহঋণ বাবদ সরল সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গঠন এবং গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, নাগরিকমুখী, কল্যাণমূলক দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ার মাধ্যমে জনগণকে উন্নত সেবা দেওয়া এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ।

মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারের তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোগী ও জনবান্ধব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হচ্ছে। সততা ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারীদের পুরস্কার ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলবো। তার সরকার সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। বর্তমান সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠক্রমে এর কুফল সংযোজন করে ছোটবেলা থেকেই তাদের সচেতন করে গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দমন, সব নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানকে প্রাধান্য ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন আমাদের কাম্য, যেখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। কেন্দ্রীয় বাজেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্তরে সরকার কর্তৃক বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভূমিব্যবস্থা এখন ডিজিটাল করা হচ্ছে। জায়গা স্বল্পতা, ব্যবস্থাপনাগত দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতার কারণে ভূমিব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতার চাহিদা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনিক সংস্কার, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা প্রয়োগের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১টি জেলায় ২০১৯ থেকে শতভাগ ই-নামজারি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস দমন, সব নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে।

দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার ॥ দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এর আওতায় গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

কৃষি ক্ষেত্রে ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।

ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হবে ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ভাড়াভিত্তিক, অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে বলা হয়, উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত, নির্ভরযোগ্য ও ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংস্থান একটি পূর্বশর্ত। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বিদেশী শোষণ চিরতরে বন্ধ এবং জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষা দিতে দেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় (১৯৯৬ থেকে ২০০১) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপক লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার সরকারের তিন মেয়াদে দেশে যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক উন্নয়ন করা হয়। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য খাত প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয়েছে।

ইশতেহারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের অঙ্গীকারগুলো হলো- নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ (রিটায়ারমেন্ট) করা হবে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিড যুগোপযোগী করা হবে। নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি এবং এই অঞ্চলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত করা হবে। সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যা রয়েছে ইশতেহারে ॥ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে স্মার্ট নাগরিক অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শতভাগ শিক্ষিত নাগরিকেরা নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেদের এবং সমাজের সকলের জীবন ও জীবিকার মান বদলে দেবে। মোবাইল, ইন্টারনেট বা কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি খাত প্রদত্ত পণ্য ও সেবা গ্রহণ করবে। দেশ-বিদেশের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন ঋদ্ধ করে তুলবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা সমাধান করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।

স্মার্ট অর্থনীতি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, স্মার্ট অর্থনীতি ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নারী-পুরুষ, শিক্ষা অথবা ভৌগোলিক দূরত্ব নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসের ব্যবহার হবে কৃষি, শিল্প, সেবা সকল খাতে। ক্ষুদ্র-কুটির, মাঝারিসহ সকল ব্যবসার পরিবেশ সহজ করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে উদ্ভাবিত সাশ্রয়ী প্রযুক্তি শিল্প-বাণিজ্যে প্রয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সহায়তা করবে। কমিয়ে ফেলা যাবে কায়িক শ্রম সম্পদের হবে সুষ্ঠু ব্যবহার। কমবে অপচয়, বাড়বে উৎপাদনশীলতা। খরচ কমবে উৎপাদনের। উৎপাদন হয়ে উঠবে প্রতিযোগিতামূলক। প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যময় হবে অভান্তরীণ ও রপ্তানি বাজার। তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নেওয়া যাবে ত্বরিত ও তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত। সহজে করা যাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠবে দক্ষ।

স্মার্ট সরকার অধ্যায়ে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার সরকার পরিচালনা ব্যবস্থাকে দক্ষ, কার্যকর এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে, সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করবে। সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্তই হবে জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যনির্ভর। প্রতিটি সেবা হবে চাহিদা অনুযায়ী এবং সমন্বিতভাবে। আইওটি, মেশিন লার্নিং, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাবলী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে স্মার্ট নাগরিকদের স্মার্ট প্রতিনিধির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করবে। সরকার তথা রাষ্ট্র হয়ে উঠবে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।

স্মার্ট সমাজ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর করা যাবে সব রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জানভিত্তিক স্মার্ট সমাজে নাগরিকেরা জ্ঞানচর্চা ও প্রয়োগের সুযোগ পাবেন অনেক বেশি। সঠিক তথ্য প্রবাহের ফলে কমে যাবে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অনৈতিক সুযোগ। প্রযুক্তি ব্যবহার সংস্কৃতিচর্চা, বিনোদন ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের সময় ও সুযোগ বৃদ্ধি করবে।